২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকেও রাজস্ব আদায় কমেছে বিপুল অঙ্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি অর্থনীতির জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’।
প্রকাশিত : ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:২১:৫৪
ঢাকা, ১ জুলাই সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা পিছিয়ে পড়েছে। এ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.৬৩ লাখ কোটি টাকা, তবে আদায় হয়েছে আনুমানিক ৩.৭০ লাখ কোটি টাকা। মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.৮০ লাখ কোটি টাকা।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, জুলাই মাসের রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধীরগতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নে মন্থরতা এবং অর্থবছরের শেষদিকে এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি এসব ঘাটতির প্রধান কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অত্যধিক উচ্চমাত্রায় নির্ধারণ করাও এই বড় ঘাটতির পেছনে অন্যতম কারণ। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব এতটাই বেশি যে, তা ছাড়াও রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন,
“আমরা এখনও পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাইনি, তবে আশা করছি রাজস্ব আদায় হবে প্রায় ৩.৭০ লাখ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা কম।”
তিনি আরো বলেন,
“গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র দুই শতাংশের কিছু বেশি।”
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই থেকে মে পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ৪৯ শতাংশে থেমেছে, যা গত দেড় দশকে সর্বনিম্ন। এডিপির কম বাস্তবায়ন রাজস্ব আদায় কম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের উৎস থেকে কর ও ভ্যাট আকারে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “অর্থনৈতিক গতিমন্থরতা, এডিপির কম বাস্তবায়ন এবং কর্মকর্তাদের আন্দোলন এই তিনটি কারণে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। জিডিপি চলতি মূল্যে ১০ শতাংশের বেশি হলেও, রাজস্ব প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশ হওয়া অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে মিলছে না।”
তিনি আরও বলেন, “এনবিআর বিলুপ্তি সংক্রান্ত অধ্যাদেশের পর কর্মকর্তাদের দাবি নিয়ে যদি দ্রুত সমাধান হতো, তাহলে রাজস্ব আদায়ে এই নেতিবাচক প্রভাব পড়তো না।”
সাম্প্রতিক এই কম প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে, যা দাঁড়িয়েছে ৪.৯৯ লাখ কোটি টাকায়।