প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৪:৪৭:৪২
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রধানমন্ত্রী পেল জাপান। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দেশটির পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন ৬৪ বছর বয়সি সানায়ে তাকাইচি। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বে থাকা তাকাইচি নিম্নকক্ষে ২৩৭ এবং উচ্চকক্ষে ১২৫ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কট্টর রক্ষণশীল ও প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী হিসেবে পরিচিত তাকাইচি এমন এক সময় দায়িত্ব নিচ্ছেন, যখন জাপান ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় ও জনঅসন্তোষের মুখে রয়েছে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্থির রাজনৈতিক সময় অতিক্রম করেছে। এরমধ্যেই পাঁচ বছরে চারজন প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছে, যার বেশিরভাগই দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন।
অক্টোবরের শুরুতে এলডিপির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে চারজন পুরুষ প্রার্থীর বিপক্ষে তাকাইচি জয়ী হলেও, জোটসঙ্গী কোমেইতো পার্টির সমর্থন প্রত্যাহার করায় তার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে ডানপন্থি বিরোধী দল জাপান ইনোভেশন পার্টির (জেআইপি) সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি সরকার গঠনে সক্ষম হন। তাকাইচি ও তার দল এলডিপিকে ২০২৮ সালে পরবর্তী নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে।
দেশীয় চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি তাকাইচির সামনে রয়েছে জটিল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রশ্ন। তার জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কারণে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়া, আর চীনের প্রতি তার কড়াকড়ি অবস্থানও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক। আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে শুল্ক সংক্রান্ত সমঝোতা হলেও ট্রাম্পের নিরাপত্তা চুক্তি ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মন্তব্য তাকাইচির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাকাইচি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তিনি একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং অতীতেও প্রধানমন্ত্রী পদে লড়েছেন। উপনির্বাচনে এলডিপির সাবেক নেতা শিগেরু ইশিবা বড় পরাজয়ের পর পদত্যাগ করলে তাকাইচি দলের নেতৃত্বে আসেন।
‘আয়রন লেডি’ খ্যাত এই রাজনীতিক নারী হিসেবে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্থাপন করলেও, তার রক্ষণশীল মতাদর্শ নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। সমলিঙ্গ বিবাহ ও বিবাহিত নারীদের নিজেদের পদবি রাখার অধিকারের বিরোধিতা করার কারণে অনেক তরুণী তার এই জয়কে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে দেখতে নারাজ। তবুও তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ ও গৃহস্থালি কর্মীদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তাকাইচির সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এখন দলের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এলডিপি গত সাত দশকের অধিকাংশ সময় জাপান শাসন করেছে, তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট ও অর্থ কেলেঙ্কারির কারণে তাদের জনপ্রিয়তা কমেছে। তাকাইচি প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়লেও তার সামনে এখন অর্থনীতি স্থিতিশীল করা, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার মতো কঠিন সব পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।