দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা জোরদার, পুলিশের আচরণে কেন্দ্রীয় নেতাদের অসন্তোষ
প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৮:০৩
জাতীয় ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা জোরদার করার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় কর্মীদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা বাড়ানো এবং অযোগ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, শুদ্ধি অভিযানের আওতায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে শোকজ করা হয়েছে, যারা দলের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন বা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। এছাড়া, কিছু কড়া পদক্ষেপের প্রস্তুতিও চলছে।
তবে শুদ্ধি অভিযানকে ঘিরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতার বরাতে জানা গেছে, শুদ্ধি অভিযানের সময় বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ অতিরিক্ত নজরদারি ও হস্তক্ষেপ করছে, যা দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নেতারা বলছেন, "দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিজেদের মতো করে সমাধান করা উচিত, সেখানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।"
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন,
আমরা নিজেদের ঘর গোছানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু পুলিশের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ ও নির্যাতনের কারণে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। এটা স্পষ্ট যে সরকারের ইন্ধনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে যাতে বিএনপির কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
গত কয়েকদিনে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে বিএনপির শুদ্ধি অভিযান নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে তৎপরতা দেখা গেছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সভা, মিছিল বা সমাবেশের খবর পাওয়ার পর পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। বিএনপির একাধিক স্থানে নেতাকর্মীদের সন্দেহভাজন তালিকাভুক্ত করার খবরও প্রকাশ পেয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যার মধ্যে প্রায় ৮০০ জনকে দল থেকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, ৭০০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ১০০ জনকে সতর্কবার্তা, এবং ১৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান চলছে। বিএনপি ছাত্রদল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং প্রায় ৬০০ নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলেও অন্তত ১০০ নেতাকর্মী বহিষ্কার এবং ১৫০ জন কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন। যুবদলের শতাধিক নেতাকর্মীও বহিষ্কারের আওতায় এসেছে।
দলীয় সূত্র বলছে, শুদ্ধি অভিযান মূলত দলের দুর্বল ও অবাঞ্ছিত সদস্যদের দলে থেকে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার রোধ এবং আসন্ন রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রস্তুতি হিসাবে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা জোরদার করা এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য। একই সঙ্গে শুদ্ধি অভিযানের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক চাপ এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত প্রকাশিত হচ্ছে। তবে বিএনপির উচ্চপদস্থ নেতারা এ প্রক্রিয়াকে দলের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুদ্ধি অভিযান বিএনপির জন্য নীতিগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর সঙ্গে জড়িত বাহ্যিক চাপ দলকে সংকটে ফেলতে পারে। এর ফলে দলীয় ঐক্যহীনতা বা নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজনের আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দলে অনৈতিক বা দুর্নীতিপূর্ণ কার্যক্রম রোধ করা গেলে, তা বিএনপির ভাবমূর্তির উন্নতি ঘটাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলের কার্যক্রম মনিটর করার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দলের মধ্যে সংঘাত বা অবাধ কার্যকলাপ রোধের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে। তবে এই পদক্ষেপগুলো বিএনপি নেতাদের চোখে রাজনৈতিক প্ররোচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।