জনসাধারণের নয়, রাজনৈতিক দলের জন্য বিশেষ ট্রেন! রেলের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জামায়াতের সমাবেশ ঘিরে ট্রেন বরাদ্দে সমালোচনার ঝড় রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম ভাঙা হয়নি।
প্রকাশিত : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১১:২০:২০
১৯ জুলাই জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত সমাবেশ উপলক্ষে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার ঘটনায় সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এতে ট্রেন পরিচালনার নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং এটি একটি "বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত" যার মধ্যে রাজনৈতিক পক্ষপাতের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়েছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) রেল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জামায়াতের সমাবেশ উপলক্ষে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি রেলওয়ের অতীত রীতি অনুযায়ী একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।”
বিভ্রান্তিকর প্রচারণার প্রতিবাদ
রেলওয়ে জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তারা একে রাজনৈতিক পক্ষপাত বলে প্রচার করলেও রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, “অতীতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জনসভা, মহাসমাবেশ কিংবা কর্মসূচির জন্য রেলের অনুমোদনে বিশেষ ট্রেন পরিচালিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত ভাড়া অগ্রিম জমা দিয়ে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দের নজির রয়েছে।” কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, “বিশেষ ট্রেন অনুমোদন না দিলে অনেক যাত্রী নিয়মিত ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করে। এতে যেমন রাজস্ব ক্ষতি হয়, তেমনি সাধারণ যাত্রীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হন।”
৩২ লক্ষ টাকার অগ্রিম পরিশোধ
জামায়াতের পক্ষ থেকে এ বিশেষ ট্রেনের জন্য ৩২ লক্ষ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে বলেও জানায় রেলওয়ে। অর্থাৎ এটি ছিল একটি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক সমঝোতা, যা রেলের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করেছে। রেলওয়ের ভাষ্যমতে, “এটি কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। বরং রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো সংগঠন বা রাজনৈতিক দল নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে আবেদনের মাধ্যমে ট্রেন বরাদ্দ নিতে পারে।”
অন্য যাত্রীদের ওপর প্রভাব পড়বে না
রেলওয়ে আরও জানায়, এই চার জোড়া ট্রেন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চালানো হবে এবং এতে সাধারণ যাত্রীদের স্বাভাবিক যাত্রা বিঘ্নিত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশ্রামে থাকা ট্রেন রেক ব্যবহৃত হবে। ফলে নিয়মিত রুটে যাত্রী সেবায় কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
রেলওয়ের অবস্থান
বিজ্ঞপ্তিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, “আমরা অতীত রীতি অনুসরণ করেছি। ভবিষ্যতেও যে কোনও রাজনৈতিক দল নির্ধারিত নিয়মে আবেদন করলে তেমন ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনও সুযোগ নেই।”
সমালোচনার পটভূমি
গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, জামায়াতের মতো একটি দলকে সরকারি পরিবহন সুবিধা দেওয়াটা কতটা যৌক্তিক? বিশেষ করে এমন একটি সময়ে, যখন সরকার ও জামায়াতের সম্পর্ক তীব্র বিরোধপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হয়তো একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও, এর রাজনৈতিক প্রতিফলন অস্বীকার করার সুযোগ নেই।