বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৪:০২
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক খাত এখন নতুন এক সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২৪’-এ দেখা গেছে, গত এক বছরে পোশাক খাতে খেলাপি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে তৈরি পোশাক খাতে বিতরণ করা ঋণের অঙ্ক দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৪৮ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪.০৪ শতাংশ। আগের বছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মাত্র এক বছরে খেলাপি বেড়েছে ২৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাত যেমন ঝুঁকিতে পড়বে, তেমনি বিদেশি ক্রেতাদের আস্থাও নষ্ট হবে। এতে রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত ধাক্কা খাবে।
শিল্প খাতজুড়ে একই চিত্র
তৈরি পোশাক ছাড়াও টেক্সটাইল, চামড়া, জাহাজ নির্মাণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পেও খেলাপি ঋণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল খাতে এক বছরে খেলাপি ঋণ ১৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ হাজার ৫২০ কোটিতে পৌঁছেছে। চামড়া ও জাহাজ নির্মাণ খাতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৪ সালের শেষে কেবল উৎপাদনমুখী শিল্প খাতেই খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা, যা দেশের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক (৪৯.৪৩ শতাংশ)।
কেন বাড়ছে খেলাপি?
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে শুল্ক-সংকট, উচ্চ সুদের হার এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এর প্রধান কারণ। তবে আরও বড় সমস্যা হচ্ছে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালীরা ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে এসব টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে।
অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, পোশাক খাতে খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধি ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও কর্মসংস্থানকেও বড় ঝুঁকিতে ফেলবে। নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে এবং বিদ্যমান শিল্প সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, কার্যকর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কঠোর বাস্তবায়ন ছাড়া খেলাপি ঋণের লাগাম টানা সম্ভব নয়।