বরখাস্ত ৩০ জনের বেশি, বাধ্যতামূলক অবসরে ৫ জন; আন্দোলনের পটভূমিতে প্রশাসনে অনিশ্চয়তা
 
                            প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ৫:১৪:৪০
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলছে নজিরবিহীন অস্থিরতা। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে বদলি করা হয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক কর্মকর্তাকে। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা এবং পাঁচজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে একসাথে ৯ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনে কিছু রদবদল হয়। তবে এবার বদলি, বরখাস্ত ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সংখ্যা, গতি ও ধরন সব মিলিয়ে রাজস্ব প্রশাসনে এক নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সম্প্রতি এনবিআর ভেঙে গঠন করা হয় রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সরকারের যুক্তি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন আলাদা হলে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়বে। তবে এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্তৃত্ব বেড়ে গেছে এবং কাস্টমস ও ট্যাক্স ক্যাডারের গুরুত্ব কমে গেছে।
এই অসন্তোষ থেকেই জুনের শেষ দিকে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা কাস্টমস হাউজ ও বেনাপোলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা লাগে। এরপর সরকার কঠোর অবস্থান নেয় এবং বদলি ও বরখাস্তের ঝড় শুরু হয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংস্কার অপরিহার্য হলেও বাস্তবায়নের ধরনে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়ন জরুরি ছিল। তবে এনবিআরকে দুটি বিভাগে ভাগ করার পদক্ষেপ খণ্ডিত আকারে নেওয়া হয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও স্বচ্ছতার অভাব আস্থার সংকট আরও বাড়িয়েছে।”
সরকার অসন্তোষ কমাতে দ্রুত সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করেছে। সেখানে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ রাজস্ব কর্মকর্তা। তবে রাজস্ব নীতি বিভাগে নিয়োগ পাবেন প্রশাসন বা এনবিআর ক্যাডারের যেকোনো কর্মকর্তা। এতে কিছুটা সমাধান এলেও পুরোপুরি আস্থা ফেরেনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুর্নীতি দমন ও সৎ কর্মকর্তাদের প্রণোদনা দুটোই সমানভাবে জরুরি। কেবল ভয় বা শাস্তির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ বর্তমানে বাজেট ঘাটতি ও ঋণের চাপে রয়েছে। একইসঙ্গে শিগগিরই এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে আসছে দেশ। ফলে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য করদাতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং কর্মকর্তাদের জন্য স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত সংস্কার নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।