দীর্ঘ বিরতির পর কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে শহরে জমছে রাজনৈতিক উত্তাপ
প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১১:১৮:৩৯
১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। রবিবার (১০ আগস্ট) বিকালে নগরীর মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন ঈদগাহ রোডে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দীর্ঘ বিরতির পর এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা। সম্মেলন উপলক্ষে কয়েক দিন ধরেই প্রধান সড়ক, মোড় ও দেয়ালজুড়ে নেতাকর্মীদের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে রাজশাহী শহরের রাজনৈতিক আবহ আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
রাজশাহী মহানগরীর সাংগঠনিক সাতটি থানা ও ৩৫টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ হাজারো নেতাকর্মী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে আয়োজকরা আশা করছেন।
আসন্ন কমিটিতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে নবীন মুখ আসতে পারে বলে ধারণা তৃণমূলের। তবে সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না— কে হবেন নগর বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক, এই প্রশ্ন সবার মধ্যে। বর্তমান মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ মামুন বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যদি চান তাহলে আমি নেতৃত্বে আসবো। রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি। এই ঘাঁটি আবারও পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে দেশনেতা তারেক রহমান যাকে নেতৃত্বে দেবেন আমরা মেনে নেবো।’
মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে যোগ্য মনে করবেন, তিনিই দায়িত্ব পাবেন। তবে অবশ্যই সৎ, যোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিত, এমন নেতৃত্ব আসবে বলে আশা করি।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘দলকে আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী করতেই এই সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপি পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে এটি হবে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন। যখন রেগুলার কমিটি হবে তখন দল চাঙ্গা হবে। গণতান্ত্রিকভাবে যাকে নির্বাচিত করবে সে নির্বাচিত হয়ে আসবে। এবার প্রায় ৭০০ কাউন্সিলর থাকছেন। আমরা আশা করছি, এ সম্মেলনের পর দলের সব বিভক্তি কেটে যাবে।’
রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, ‘যারা বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে কাজ করেছেন, মামলা খেয়েছেন, জেলে গেছেন, রাজপথে ছিলেন এবং সৎ ও যোগ্য; তারাই নেতৃত্বে আসবেন।’
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সম্মেলন বিএনপির জন্য একটি বড় পরীক্ষা। দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটিয়ে কতটা সক্রিয়ভাবে তারা মাঠে ফিরতে পারে, এই সম্মেলন তার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিতে পারে।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, ‘রাজশাহী মহানগরে বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা, মামলা-হামলা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এত বছর সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়নি। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে জর্জরিত করা হয়েছিল। ফলে রাজনীতি করার পরিবেশ ছিল না।
‘আগামী দিনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশের ক্ষমতায় যাবে বিএনপি। শত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণ এই নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। নির্বাচন প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ। দল থেকে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, তারাই প্রার্থী হবে— এ নিয়ে কোনও দ্বন্দ্ব নেই।’
আব্দুস সালাম আরও বলেন, ‘এই সম্মেলন শুধু সাংগঠনিক কার্যক্রম নয়, বরং আগামী দিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিএনপির ঐক্য ও সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠবে।
‘বিগত পতিত সরকারের আমলে অফিস ছিল না। একত্র হয়ে কোনও সভা-সমাবেশ করতে পারিনি। পুলিশ আটক করে নিয়ে যেত। সভা-সমাবেশের অনুমতি দিতো না। শেখ হাসিনা বিএনপিকে একটি হটকারী দল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিএনপি কখনও হটকারী পথে যায়নি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও ঘোষণা ছিল গণতন্ত্র।’
তিনি বলেন, ‘অনেক দল আছে তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে গণতন্ত্র নেই। কয়টি দল কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেছে। কিন্তু বিএনপির প্রতিটি থানা, জেলা, উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলর করে নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে।’