অর্থনীতি ও সীমান্ত নিরাপত্তা ঘিরে আলোচিত বিল পাস করে চমকে দিলেন ট্রাম্প, সমালোচকরা বলছেন ‘রাজনৈতিক নাটক’!
প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:৩১:০৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ জুলাই, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে হোয়াইট হাউজে প্রস্তাবিত বড় ধরনের কর ছাড় ও ব্যয় বিলটি স্বাক্ষর করে এটি আইনে পরিণত করেছেন। স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে সই করার মাধ্যমে ট্রাম্প এই বিলকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রূপ দিয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর নিশ্চিত করেছে।
বিলটি স্বাক্ষরের একদিন আগেই রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটি হয়ে পাস হয় অত্যন্ত সংকীর্ণ ব্যবধানে ২১৮ ভোট পক্ষে ও ২১৪ ভোট বিপক্ষে। এই বিল ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম প্রধান আইন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিলের মাধ্যমে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি সংক্রান্ত কঠোর দমন অভিযান কার্যক্রম চালানোর জন্য তহবিল নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রণীত কর ছাড়ের ধারাবাহিক ও সম্প্রসারিত সংস্করণ, যা ২০১৭ সালের কর ছাড়কে স্থায়ী করার পাশাপাশি ব্যয় বৃদ্ধি করবে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এতে কয়েক মিলিয়ন আমেরিকান স্বাস্থ্যবিমা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বৃদ্ধি পাবে।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, “আমি কখনো দেখিনি আমাদের দেশে মানুষ এতটা খুশি হয়েছে। কারণ এতে সেনাবাহিনী, বেসামরিক নাগরিক ও চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণির মানুষ উপকৃত হচ্ছে।” তিনি হাউস স্পিকার মাইক জনসন ও সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনারা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর ছাড় এবং সর্ববৃহৎ সীমান্ত নিরাপত্তা বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছেন।”
হোয়াইট হাউজের সাউথ লনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে সামরিক স্টেলথ বোমার ও ফাইটার জেটের প্রদর্শনী হয়, যা সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের শত শত সমর্থক, কংগ্রেস সদস্য এবং সামরিক পরিবার।
ট্রাম্প তার বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের “উত্থান” নিয়ে আত্মপ্রশংসা করেন এবং বিলটিতে স্বাক্ষর করার পর রিপাবলিকান কংগ্রেসনাল নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে ছবি তোলেন। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি উদ্দীপ্ত সমর্থকদের মাঝে হাঁটেন।
বিল পাস হওয়া ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের জন্য এক বড় জয়, যাদের দাবি এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। যদিও দলের কিছু আইনপ্রণেতা ব্যয় এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, প্রতিনিধি পরিষদের ২২০ জন রিপাবলিকানের মধ্যে মাত্র দু’জন বিলের বিরোধী ছিলেন। অন্যদিকে, ২১২ জন ডেমোক্র্যাট এই বিলের বিরোধিতা করেন।
উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে, হাউজ ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস ইতিহাসের দীর্ঘতম ভাষণ দেন ৮ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ধরে যেখানে তিনি বিলটিকে ধনী শ্রেণির জন্য “উপহার” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এটি কম আয়ের আমেরিকানদের স্বাস্থ্য বীমা ও খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত করবে।
ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির চেয়ার কেন মার্টিন বলেন, “এই আইন ২০২৬ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জন্য বিরাট ঝুঁকি হবে। আজ ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন এখন এই দল কেবল বিলিয়নিয়ার ও বিশেষ স্বার্থ গোষ্ঠীর পক্ষে, সাধারণ শ্রমজীবী পরিবারের পক্ষে নয়।”
তিনি আরও সতর্ক করেছেন, “এই আইন রিপাবলিকানদের উপর বছরের পর বছর জড়িয়ে থাকবে। এটি ছিল আমেরিকান জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।” ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের গুরুত্বপূর্ন সতর্কবার্তা দিয়েছেন, আগামী দিনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোও হতে পারে।