 
                            প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৬:২০
চলমান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফেস গাজা উপত্যকায় হালমা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় এখন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ৬৩ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েল দাবি করে, হামাস তাদের এক সেনাকে হত্যা করেছে এবং এক জিম্মির মরদেহ ‘সাজানো নাটকের অংশ হিসেবে’ প্রকাশ করেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানায়, সেনা নিহতের ঘটনার পরই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ‘অবিলম্বে ও শক্তিশালী’ হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানান, ওয়াশিংটনকে এ হামলার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আগেই অবহিত করা হয়েছিল।
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামাস বলেছে, এটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া তারা ইসরায়েলি সেনাদের ওপর আক্রমণের অভিযোগও অস্বীকার করেছে এবং যুদ্ধবিরতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানায়, নিহত সেনার নাম মাস্টার সার্জেন্ট ইয়োনা এফ্রেইম ফেল্ডবাউম (৩৭)। তিনি পশ্চিম তীরের জায়িত রআনান বসতি এলাকার বাসিন্দা। গাজা ডিভিশনের কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসে দায়িত্ব পালনকালে দক্ষিণ গাজায় তিনি নিহত হন।
এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, হামাস পূর্ব দিকের ‘হলুদ রেখা’-এর কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর আরপিজি ও স্নাইপার হামলা চালায়। এরপরই রাফাহসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়।
গাজার হাসপাতালগুলো জানায়, ৬৩ জন নিহতদের মধ্যে রয়েছে গাজা সিটির আল-সাবরা এলাকায় তিন নারী ও এক পুরুষ এবং দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনুসে দুই শিশু, এক নারীসহ আরও কমপক্ষে পাঁচ জন।
আইডিএফ একটি ড্রোন ভিডিও প্রকাশের পর দাবি করে, হামাস যোদ্ধারা গাজা সিটিতে একটি লাশ মাটিচাপা দিয়ে পরে ‘উদ্ধারের নাটক’ সাজিয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিন ব্যক্তি সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি দেহ গর্তে কবর দিচ্ছে এবং পরে রেড ক্রসকে দেখানোর জন্য তা আবার বের করছে।
রেড ক্রস বলেছে, তারা জানত না যে সেখানে আগেই কেউ লাশ পুঁতে রেখেছিল। প্রতিষ্ঠানটি ঘটনাটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করে।
ভিডিওর সত্যতা বা এতে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় সিএনএন এর পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
নতুন হামলার পর হামাস ঘোষণা করে, তারা এক জিম্মির দেহ হস্তান্তর স্থগিত করছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলের হামলা চলতে থাকলে মৃত জিম্মিদের দেহ উদ্ধার এবং অনুসন্ধান অভিযান বাধাগ্রস্ত হবে।
হামাস জানায়, খান ইউনুসের একটি টানেল থেকে উদ্ধার করা দেহটি মঙ্গলবার রেড ক্রসের মাধ্যমে হস্তান্তর করার কথা ছিল।
এছাড়া নুসেইরাতে আরেকটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে দ্বিতীয় এক দেহ উদ্ধার করা হয়, যে ভবনটিতে ২০২৪ সালে ইসরায়েলি উদ্ধার অভিযান চালিয়ে তিন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই অভিযানে ২৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার হামাস যেসব দেহাবশেষ ফেরত দেয়, তা ১৩ নিখোঁজ জিম্মির কারও নয় বলে ইসরায়েল দাবি করেছে। শনাক্ত করে দেখা যায়, এটি ওপির জারফাতির দেহাবশেষ। তিনি ২০২৩ সালের নভেম্বরে উদ্ধার অভিযানে নিহত হয়েছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েল গাজায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু করে। হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
দুই বছরের সংঘাতে গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৫২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৫ জন আহত হয়েছেন বলে গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এছাড়া বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা রয়েছে।
২০২৫ সালের ৯ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। এতে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান আংশিক প্রত্যাহারের শর্ত ছিল। তবে এখন পর্যন্ত ২৮ মৃত জিম্মির মধ্যে মাত্র ১৫ জনের দেহ ইসরায়েলে ফেরত এসেছে।