 
                            প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩:১৭:৪৯
চীনের ইতিহাসের অন্যতম বড় সামরিক শুদ্ধি অভিযানে ৯ শীর্ষ জেনারেলকে বহিষ্কার করেছে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)। বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বহিষ্কৃত জেনারেলদের অধিকাংশই ছিলেন তিন-তারকাধারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। শুধু দল থেকেই নয়, তাদের সেনাবাহিনী থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
সরকার এ ঘটনাকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটিকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক প্রভাব দৃঢ় করার এক শুদ্ধি অভিযান হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বিশেষত এমন সময় এই ঘোষণা এসেছে, যখন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও নতুন সদস্য নির্বাচনের জন্য প্লেনারি অধিবেশন আয়োজন করতে যাচ্ছে।
বহিষ্কৃত ৯ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা হলেন—হে ওয়েইদং (কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের উপ-সভাপতি), মিয়াও হুয়া (রাজনৈতিক কার্যক্রম বিভাগের পরিচালক), হে হংজুন (একই বিভাগের নির্বাহী উপপরিচালক), ওয়াং সিউবিন (যৌথ অভিযান কমান্ড সেন্টারের নির্বাহী উপপরিচালক), লিন শিয়াংইয়াং (পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধক্ষেত্রের কমান্ডার), চিন শুটং (সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার), ইউয়ান হুয়াঝি (নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার), ওয়াং হৌবিন (রকেট বাহিনীর কমান্ডার), ওয়াং চুননিং (সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কমান্ডার)।
এর মধ্যে হে ওয়েইদং সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পরে সামরিক কাঠামোয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে ছিলেন।
হে ওয়েইদংকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল মার্চ মাসে। এরপর তার দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়। তিনি শুধু সামরিক কমিশনের সদস্যই নন, রাজনৈতিক ব্যুরোর (পলিটব্যুরো) সদস্যও ছিলেন, যা কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এ পদে থাকা অবস্থায় তদন্তের মুখোমুখি হওয়া প্রথম ব্যক্তি তিনি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এই কর্মকর্তারা দলের শৃঙ্খলা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছেন এবং বিপুল আর্থিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা এখন সামরিক আদালতের মুখোমুখি হবেন এবং এই শুদ্ধি অভিযানকে দল ও সেনাবাহিনীর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন ইতোমধ্যেই গত জুলাইয়ে নতুন নীতিমালা জারি করে সেনাবাহিনীতে ‘বিষাক্ত প্রভাব’ নির্মূলের আহ্বান জানিয়েছিল। সেখানে কঠোর আচরণবিধি বা ‘আয়রন রুলস’ নির্ধারণ করা হয়।
এই অভিযানের আগে আরও কয়েকজন জেনারেলকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে ও লি শাংফু। রকেট বাহিনীর নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তখনই ওয়াং হৌবিনকে নতুন কমান্ডার করা হয়, যিনি এখন বহিষ্কৃতদের তালিকায় আছেন।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে শুধু সামরিক নয়, বেসামরিক কর্মকর্তাদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ২০২৩ সালে হঠাৎ নিখোঁজ হন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গাং, আর যিনি তাকে প্রতিস্থাপনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন, সেই লিউ জিয়ানচাও-কেও জুলাইয়ের পর থেকে দেখা যায়নি।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের চীনা রাজনীতি-বিষয়ক গবেষক নিল থমাস বিবিসিকে বলেন, ‘শি জিনপিংয়ের এসব শুদ্ধি অভিযান শক্তির প্রদর্শন। তার মতে, দুর্নীতিগ্রস্ত বা অবিশ্বস্ত কর্মকর্তাদের অপসারণই হলো দলের ‘সংস্কার’—যা দলকে আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ ও কার্যকর করবে।’
২০ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া চতুর্থ প্লেনারি অধিবেশনে কারা অংশ নেন, সেটাই এখন পর্যবেক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। থমাস বলেন, ‘যদি উপস্থিতি হ্রাস পায়, তাহলে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত যে, শুদ্ধি অভিযান কতটা বিস্তৃত হয়েছে।’