 
                            প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২:৪২:২১
বিশ্বজুড়ে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ বা ট্রাভেল ওপেননেস একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তি নির্ধারণের অন্যতম মানদণ্ড। আর সেই মাপকাঠিতে তৈরি হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স-এর সাম্প্রতিক তালিকায় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে পড়েছে। এবারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে তিনটি এশীয় দেশ—সিঙ্গাপুর (১৯৩টি গন্তব্যে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার), দক্ষিণ কোরিয়া (১৯০টি গন্তব্যে) ও জাপান (১৮৯টি গন্তব্যে)।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র নেমে গেছে ১২তম স্থানে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমানভাবে অবস্থান করছে দেশটি। দুই দেশের নাগরিকই ২২৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ১৮০টিতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন এসব তথ্য জানিয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার একচেটিয়া তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে।
হেনলির নিয়ম অনুযায়ী, একাধিক দেশের স্কোর সমান হলে তাদের এক র্যাংকে রাখা হয়। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের আগে মোট ৩৬টি দেশ অবস্থান করছে।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছিল তালিকার শীর্ষে। এমনকি ২০২৫ সালের জুলাইয়েও তারা শীর্ষ ১০-এ টিকে ছিল। তবে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একাধিক দেশে প্রবেশাধিকারের নিয়ম পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও অবনতি হয়েছে।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা তুলে নেয় ব্রাজিল। অন্যদিকে, চীন ইউরোপের বহু দেশের জন্য ভিসা ছাড়ের নীতি চালু করলেও, যুক্তরাষ্ট্রকে সেই তালিকায় রাখেনি।
পাপুয়া নিউগিনি ও মিয়ানমারও তাদের প্রবেশনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ফলে অন্য দেশের পাসপোর্ট সুবিধা পেলেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও দুর্বল করেছে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স-এর চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান এইচ. কায়েলিন বলেন, ‘যেসব দেশ সহযোগিতামূলক ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েছে, তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আর যারা পুরোনো বিশেষাধিকারে ভর করে আছে, তারা পিছিয়ে পড়ছে।’
২০১৫ সালে শীর্ষে থাকা যুক্তরাজ্যের অবস্থানও নেমে গেছে। জুলাই থেকে আরও দুই ধাপ নিচে নেমে এখন তারা রয়েছে ৮ম স্থানে।
একই সময়ে চীন গত দশকে দ্রুত উত্থান ঘটিয়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে তারা ছিল ৯৪তম স্থানে, এখন উঠে এসেছে ৬৪তম স্থানে। গত দশ বছরে ৩৭টি নতুন গন্তব্যে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছে তারা।
হেনলি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া, গালফ দেশগুলো, দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সঙ্গে চীনের নতুন চুক্তিগুলো তাদের পাসপোর্টের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও (ইউএই) অন্যতম বড় সাফল্যের গল্প। গত এক দশকে দেশটি ৩৪ ধাপ এগিয়ে ৪২তম স্থান থেকে উঠে এখন ৮ম স্থানে।
অন্যদিকে তালিকার নিচে রয়ে গেছে আফগানিস্তান (১০৬তম), যার ভিসামুক্ত গন্তব্য মাত্র ২৪টি। সিরিয়া (২৬টি) এবং ইরাক (২৯টি) যথাক্রমে ১০৫ ও ১০৪তম স্থানে রয়েছে। শীর্ষ ও তলানির দেশের মধ্যে এখন ভ্রমণ স্বাধীনতার ফারাক ১৬৯ গন্তব্যের। আর এই তালিকায় বরাবর ১০০তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ (৩৮টি ভিসামুক্ত গন্তব্য)।
সিএনএনের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক রিচার্ড কুয়েস্ট গত জুলাইয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের নতুন ভিসা-সদৃশ ইএসটিএ ব্যবস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ উন্মুক্ততায় প্রভাব ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে কি? হ্যাঁ, কিছুটা বলা যায় যে একটি অন্যটির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।’
তবে কুয়েস্ট যোগ করেন, শীর্ষ দেশের পাসপোর্টগুলো এখনো অত্যন্ত আকর্ষণীয়। অনেক ধনী ব্যক্তি বিনিয়োগের মাধ্যমে এমন নাগরিকত্ব অর্জনের চেষ্টা করেন, যেমন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৫ মিলিয়ন ডলারের ‘গোল্ড কার্ড’ স্কিম। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য এতে খুব একটা পার্থক্য হয় না।’
২০২৫ সালের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টগুলোর তালিকা (হেনলি ইনডেক্স অনুযায়ী)
১. সিঙ্গাপুর (১৯৩ গন্তব্য)
২. দক্ষিণ কোরিয়া (১৯০ গন্তব্য)
৩. জাপান (১৮৯ গন্তব্য)
৪. জার্মানি, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, স্পেন, সুইজারল্যান্ড (১৮৮ গন্তব্য)
৫. অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস (১৮৭ গন্তব্য)
৬. গ্রিস, হাঙ্গেরি, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, সুইডেন (১৮৬ গন্তব্য)
৭. অস্ট্রেলিয়া, চেক রিপাবলিক, মাল্টা, পোল্যান্ড (১৮৫ গন্তব্য)
৮. ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য (১৮৪ গন্তব্য)
৯. কানাডা (১৮৩ গন্তব্য)
১০. লাতভিয়া, লিচটেনস্টাইন (১৮২ গন্তব্য)
১১. আইসল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া (১৮১ গন্তব্য)
১২. যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া (১৮০ গন্তব্য)