 
                            প্রকাশিত : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৬:২৭
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া শত শত ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে আনন্দ আর অশ্রুতে স্বাগত জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের সেই মুহূর্তগুলো ছিল বেদনামিশ্রিত আনন্দের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রায় ২৫০ জনের মতো এমন বন্দি ছিলেন যাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ইসরায়েলিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার মতো অপরাধের অভিযোগে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া গাজা থেকে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জনকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক রেখেছিল ইসরায়েল। তারাও মুক্তি পেয়েছেন।
রামাল্লাহতে রেডক্রসের বাস থেকে নামার সময় অনেক বন্দিকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। অনেকেই ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ স্কার্ফে মুখ ঢেকে ছিলেন, কেউ কেউ হাঁটতেও কষ্ট পাচ্ছিলেন।
এর আগে বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে এবং চার জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে।
মুক্তি পাওয়া চাচাতো ভাই রশিদ ওমরের (৪৮) অপেক্ষায় থাকা আমরো আবদুল্লাহ (২৪) বলেন, রশিদ ২০০৫ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হন এবং হত্যাসহ নানা অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান।
তিনি বলেন, ‘আমি শান্তি চাই। আমি এমন এক সুখী জীবন চাই, যেখানে থাকবে না দখলদারিত্ব, থাকবে না কোনো বাধা।’
ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১০০ বন্দিকে পশ্চিম তীরে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও অনেককেই আবার নির্বাসনে পাঠানো হবে। আর অল্প সংখ্যক মুক্তি পেয়েছেন পূর্ব জেরুজালেমে।
মুক্তির আগে ইসরায়েল জানিয়েছিল, তারা রামাল্লাহতে অতীতের মতো হামাস পতাকাধারী জনসমাগম দেখতে চায় না। অনেক পরিবার আবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছুক ছিলেন। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনারা তাদের সতর্ক করেছিল বলে জানা গেছে।
গাজায় খানের ইউনুসের নাসের হাসপাতালে স্বজনদের অপেক্ষায় ভিড় করে বহু পরিবার। হাসপাতালের পাশে একটি অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতালও তৈরি করা হয় বন্দিদের গ্রহণের জন্য।
মুক্তি পাওয়া ছেলেকে নিতে গিয়ে মোহাম্মদ হাসান সাঈদ দাউদ বলনে, ‘এটা এক অসাধারণ অনুভূতি। এটা খুশির দিন, আনন্দের দিন।’ তিনি জানান, তাঁর ছেলেকে এক চেকপোস্ট থেকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছিল।
খলিল মুহাম্মদ আবদুররহমান আল-কাত্রুসও এসেছিলেন তার ছেলেকে নিতে। তিন মাস ধরে তিনি ইসরায়েলের হাতে আটক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখানে আনন্দ আছে, কষ্ট আছে, সুখ আছে, আবার দুঃখও আছে। আমরা সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করছি, এখন দুপুর পেরিয়ে গেছে, আমরা এখনো উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছি।’
রামাল্লাহতে মুক্তির আগে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয় আহত বন্দিদের চিকিৎসার জন্য।
সংস্থাটির স্বেচ্ছাসেবী নার্স ইব্রাহিম ইফানি বলেন, ‘পরিবারের কান্না আর নীরবতা বোঝায় তাদের অনুভূতি কেমন। ফিলিস্তিনের সব মানুষের জন্যই এটা গভীর আবেগের মুহূর্ত।’
এদিকে, একাধিক চিকিৎসক ও স্বজনরা দাবি করেছেন, মুক্তির আগে বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে গত মাসে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছিলেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না।
ফিলিস্তিন প্রিজনার্স ক্লাবের আয়া শ্রেইত (২৬) বলেন, ‘তাদের অধিকার সবচেয়ে ভয়াবহভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। গত এক বছরে বেশিরভাগ বন্দিকে পরিকল্পিতভাবে অনাহারে রাখা হয়েছে।’
এই জিম্মি ও বন্দি বিনিময় ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধ সমাপ্তের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। গত শুক্রবার থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, আর এখন শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।