 
                            প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ৩:৫৫:৫৮
সীমান্ত অভিযানে ৫৮ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে আফগানিস্তান। আফগান ভূখণ্ড ও আকাশসীমা ‘বারবার লঙ্ঘনের’ জবাব হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে দাবি তাদের। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সপ্তাহের শুরুর দিকে রাজধানী কাবুল ও পূর্বাঞ্চলের একটি বাজারে পাকিস্তান বোমা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ আফগানিস্তানের। যদিও পাকিস্তান এই দায় অস্বীকার করেছে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ রোববার কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের বাহিনী ২৫টি পাকিস্তানি সেনা পোস্ট দখল করেছে। অভিযানে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানের সব সরকারি সীমান্ত ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণরেখা এখন সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং অবৈধ কার্যক্রম অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।’
তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার রাতভর সীমান্তে সফল অভিযান চালানো হয়েছে। প্রতিপক্ষ যদি আবারও আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে, তাহলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কঠোর জবাব দেবে।
এদিকে, রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় খোলার কথা থাকলেও তোরখাম সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ ছিল। একইভাবে চামান সীমান্ত পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তোরখাম ও চামান আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দুটি প্রধান বাণিজ্য পথ।
পাকিস্তান বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, আফগান কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায়।
তবে কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয় না।
আফগান পক্ষের হতাহতের দাবি প্রকাশের আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা আফগানিস্তানের উসকানির জবাব দিয়েছে এবং তাদের বেশ কয়েকটি সীমান্ত পোস্ট ধ্বংস করে পিছু হটাতে বাধ্য করেছে।’
এদিকে, শনিবার রাতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দুপক্ষকে সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংযম, উত্তেজনা হ্রাস এবং আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, আফগান বাহিনী প্রথমে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চিত্রাল, বাজাউর, মোহমান্দ, আঙ্গুর আড্ডা ও কুররম জেলায় গুলি চালায়। পরে পাকিস্তানি সেনারা খাইবার জেলার তিরাহ অঞ্চল ও আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে ভারী অস্ত্র দিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ২ হাজার ৬১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা দুরান্দ লাইন নামে পরিচিত। কিন্তু আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত এই সীমান্তকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।