 
                            প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫২:১৭
গত শুক্রবার কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর থেকে শনিবার পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি ফিরেছেন গাজা নগরীতে। অনেকেই ধ্বংসের চিত্র দেখে হয়েছেন হতবাক, কেউ আবার অক্ষত ঘরবাড়িতে ফিরে পেয়েছেন স্বস্তি। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসালের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স ২৪ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে কয়েকটি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর হাজার হাজার ক্লান্ত ফিলিস্তিনি উপকূলীয় সড়ক ধরে উত্তরে নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা হন।
রজিয়া সালমি নামের এক ফিলিস্তিনি নারী বলেন, ‘আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেছি, প্রতিটি পদক্ষেপেই মনে ভয় ছিল, আমাদের বাড়ি এখনো আছে তো?’ তবে শেষমেষ আল-রিমাল এলাকায় নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে দেখেন সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
তিনি বলেন, ‘এখন আর কিছুই নেই, শুধু ধুলো আর ভাঙা দেয়াল। আমি দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম, আমার সব স্মৃতি এখন ধ্বংসের মধ্যে চাপা পড়েছে।’
গাজার আল-রান্তিসি শিশু ও ক্যান্সার হাসপাতালের ফুটেজে দেখা যায়, ওয়ার্ডগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, লোহার খাট উল্টে আছে, ছাদ ভেঙে পড়েছে, চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চিকিৎসা সরঞ্জাম।
সাহের আবু আল-আত্তা নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি কী বলব জানি না। চিত্রই সব বলে দেয়—ধ্বংস, ধ্বংস আর ধ্বংস।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাস দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় অপহৃত ২৫১ জনের মধ্যে জীবিত অথবা মৃত ৪৭ বন্দিকে ফেরত দেবে। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে গাজায় আটক এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহও ফেরত দিতে হবে।
বিনিময়ে ইসরায়েল আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ জন বন্দি এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আটক এক হাজার ৭০০ জন গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। প্রকাশিত বন্দিদের তালিকায় হামাসের চাওয়া কোনো শীর্ষ জঙ্গি নেতার নাম নেই বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি বাহিনী স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৯টায় আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়, যা হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে। সোমবার সকালে এর মেয়াদ শেষ হবে।
হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) এক যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতিকে ইসরায়েলের জন্য ‘একটি পরাজয়’ বলে উল্লেখ করেছে।
তারা বলেছে, ‘আমরা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে দায়িত্বশীলভাবে কাজ চালিয়ে যাব, যাতে দখলদার শক্তি আমাদের জনগণের অধিকার রক্ষা ও তাদের কষ্টের অবসান নিশ্চিত করতে বাধ্য হয়।’
এদিকে যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন এই যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে, কারণ উভয় পক্ষই এখন ক্লান্ত। তিনি এ সপ্তাহান্তে ইসরায়েল ও মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর সফরের পরিকল্পনাও নিশ্চিত করেছেন।