আনুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্যেই শুল্ক আরোপে ক্ষুব্ধ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উত্তপ্ত হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক
প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২:৫০:৪৭
বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলা উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে, উভয় পক্ষই একে ‘ঐতিহাসিক সমঝোতা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপ করেছে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, যা নিয়ে আবারও নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে ইউরোপজুড়ে। রবিবার (২৭ জুলাই) স্কটল্যান্ডে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনের মধ্যে এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর এই ঘোষণা আসে। পরবর্তীতে ট্রাম্পের বিলাসবহুল গলফ রিসোর্ট টার্নবেরিতে এক যৌথ বিবৃতিতে চুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা থেকে মুক্তি
চুক্তির ফলে সম্ভাব্য একটি বড় ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো গেছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল। ট্রাম্প বলেন, “এটা আমার মতে সবচেয়ে বড় চুক্তিগুলোর একটি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং আমাদের কাছ থেকে জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কেনা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াবে।” উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, “এই চুক্তি আমাদের জন্য স্থিতিশীলতা এবং সমতা নিশ্চিত করবে। এটি পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।”
চুক্তির পর ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিখায়েল মার্টিন সতর্ক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “শুল্কের হার আগের তুলনায় কম হলেও, এটি আমাদের জন্য বাণিজ্যকে আরও ব্যয়বহুল ও কঠিন করে তুলবে।”জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্জ বলেন, “বাণিজ্যিক সংঘাত হলে জার্মান অর্থনীতির ওপর বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।” ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি চুক্তিকে ‘সময়োপযোগী পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই ট্রাম্পের সঙ্গে টার্নবেরিতে বৈঠক করবেন।
বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী?
২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পণ্যের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৭৬ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে ৬০৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, আর রপ্তানি করেছে ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই বিপুল ঘাটতির সমাধানেই মূলত ট্রাম্পের শুল্ক নীতির আগ্রাসন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’ করার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ না হলেও, এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।