রাজশাহীর কিশোরের ‘স্মার্ট গ্লাভস’ বদলে দিচ্ছে বোবা মানুষের জীবন
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ১০:৪৭:১৩
রাজশাহীর কিশোরের ‘স্মার্ট গ্লাভস’ বদলে দিচ্ছে বোবা মানুষের জীবন প্রযুক্তি ও মানবিকতার এক নতুন সীমানা অতিক্রম করল বাংলাদেশ
আবিষ্কারের পেছনে কাহিনি: একটি নতুন যাত্রার সূচনা:রাজশাহীর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান একদিন তার প্রতিবন্ধী মামার সাথে সময় কাটাতে গিয়েই আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা পায়। মামা কিছু বলতে পারেন না, কিন্তু ইশারায় কথা বলেন। সেই অসহায়তাবোধ থেকেই মেহেদীর মাথায় আসে এমন কিছু বানানোর ভাবনা, যা ইশারাকে সরাসরি শব্দে রূপান্তর করতে পারবে।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে সে তৈরি করে ‘স্মার্ট গ্লাভস’, যা আঙ্গুলের ভঙ্গিমা অনুযায়ী কম্পিউটারে সংকেত পাঠায় এবং একটি ভয়েস আউটপুটে তা উচ্চারিত হয়। এমন প্রযুক্তি বিশ্বে থাকলেও এটি এত সস্তায় এবং সহজভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা বিরল।
স্কুলের ছাত্র, রোবটিক্সের স্বপ্ন: বাংলাদেশের গর্ব
"অল্প বয়সে বড় কাজ করে ফেলেছে!"এই বাক্যটিই এখন ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ফোরাম পর্যন্ত। রাজশাহীর এক স্কুলপড়ুয়া ছাত্র সম্প্রতি এমন একটি ‘স্মার্ট গ্লাভস’ তৈরি করেছে, যা বোবা ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষদের কথা ‘ভয়েসে’ রূপান্তর করতে পারে। এ আবিষ্কারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর CNN, Al Jazeera, TechCrunch-এর মতো বিশ্ব মিডিয়াও শিরোনামে তুলে এনেছে তাকে।
ভাইরাল হলো কিভাবে?
ইউটিউবে একটি টেকনোলজি বিষয়ক চ্যানেল ওই ছাত্রের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। মাত্র ৩ দিনে ভিডিওটি ১.২ মিলিয়ন বার দেখা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কিভাবে সে সস্তায় তৈরি ‘আরডুইনো বেসড’ গ্লাভস দিয়ে ইংরেজি অক্ষর শনাক্ত করে এবং স্পিকারের মাধ্যমে তা উচ্চারণ করে। অনেকে বলছেন, এটি গুগল বা অ্যাপলও এখনও এত কম দামে দিতে পারেনি।
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাসির রহমান বলেন,“এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এটি আমাদেরই এক কিশোরের মাথা থেকে এসেছে। এই ছেলে আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির বাইরে গিয়েও প্রমাণ করেছে, আগ্রহ থাকলে কোনো কিছুর অভাব বাঁধা হতে পারে না।”
আবিষ্কারটি কীভাবে কাজ করে?
ছাত্রটির বানানো গ্লাভসে রয়েছে সেন্সর, যা আঙ্গুলের গতিবিধি অনুযায়ী সিগন্যাল পাঠায় একটি ছোট কম্পিউটারে। সেই ডেটা কনভার্ট হয়ে ভয়েস কমান্ড আকারে বের হয়। এটি বোবা ব্যক্তিদের হাতের ভাষা ভয়েসে রূপান্তর করতে সক্ষম। তাকে সহায়তা করেছে ইউটিউব ও ফ্রি অনলাইন কোর্স।
ধর্মীয় ও সামাজিক অনুপ্রেরণা
ছাত্রটি জানায়, তার এই কাজের পেছনে অনুপ্রেরণা ছিল পবিত্র কুরআনের এই আয়াত:"যে ব্যক্তি একজন প্রাণ বাঁচায়, সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল।" (সূরা মায়িদা ৫:৩২)
সে বলেছে, “আমি চাই, আমার আবিষ্কার দিয়ে একদিন সবাই উপকার পাবে। আমি এটা ওয়াকফ করে দিতে চাই ইনশাআল্লাহ।”
🇧🇩 বাংলাদেশের তরুণদের জন্য বার্তা
এই উদাহরণটি দেখায় যে, প্রযুক্তির জগতে বাংলাদেশি তরুণদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু দিকনির্দেশনা ও সহায়তা। এমন উদ্ভাবন যদি সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে সঠিকভাবে লালন করা হয়, তবে বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে প্রযুক্তিতে পরিণত হতে পারে পরবর্তী শক্তি।
ভিন্ন রকম সংবাদ বলেই ভাইরাল
তরুণদের ‘ফান কনটেন্ট’ থেকে বের করে এনে এমন গঠনমূলক ভাইরাল কনটেন্ট তৈরি করা এক বড় বার্তা ভালো কিছু এখনও ভাইরাল হতে পারে, যদি তাতে সমাজ পরিবর্তনের ইঙ্গিত থাকে।
বাংলাদেশি ছাত্রের সস্তা স্মার্ট গ্লাভস বদলে দিচ্ছে বোবা মানুষের জীবন বিশ্ব মিডিয়ায় শোরগোল!"
“১২০ টাকায় রোবট বানিয়ে বিশ্ব কাঁপাচ্ছে রাজশাহীর ছাত্র! কীভাবে সম্ভব হলো?”