ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে পাঠানো চিঠির পরপরই ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ রাজনৈতিক না বাণিজ্যিক, প্রশ্ন তোলছে মহলগুলো।
প্রকাশিত : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৩:৫৮
বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (৭ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দেন তিনি। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক কার্যকর হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেন, “এই শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশসহ কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ঘাটতির বৈষম্য দূর করা। ৩৫ শতাংশ শুল্ক হলো আমাদের প্রাপ্য শুল্কের তুলনায় অনেক কম।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। তবে যদি বাংলাদেশ পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ায়, তাহলে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কও সেই পরিমাণ বাড়ানো হবে।”
শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পণ্যে ২৫%, মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যে ৪০%, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০%, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ায় ২৫%, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২%, বসনিয়া ও সার্বিয়ায় ৩০%, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬%, এবং কাজাখস্তানের পণ্যে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
উল্লেখ্য, এর আগে ৯ এপ্রিল বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করায় তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। সেই শুল্ক স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই। তার আগেই পুনরায় ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা এল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও রফতানিকেন্দ্রিক শিল্পখাতের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রফতানি গন্তব্যগুলোর একটি হওয়ায় এই শুল্ক চাপ সরাসরি রফতানি আয় ও শিল্পখাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে কূটনৈতিক মহলে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতির দায় একতরফাভাবে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত কূটনৈতিক ভারসাম্যের বিরুদ্ধে যেতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য ও কূটনৈতিক অঙ্গনে এই পদক্ষেপ কতটা প্রভাব ফেলবে এবং বাংলাদেশ কীভাবে এর জবাব দেবে, তা এখন সময়ের অপেক্ষা।