সময়মতো অপারেশন ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় বড় সাফল্য
প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২৫, ৯:৪৬:২৪
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি, রফতানি এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে একাধিক রেকর্ড গড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসও রাজস্ব আদায়ে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি ইঙ্গিত।
কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ একক কনটেইনার এবং ১৩ কোটি ৭ লাখ মেট্রিক টন কার্গো। একই সময়ে বন্দরে ভিড়েছে ৪ হাজার ৭৭টি জাহাজ। আগের বছর (২০২৩-২৪) হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ কনটেইনার এবং ১২ কোটি ৩২ লাখ মেট্রিক টন কার্গো।
বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন,
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা, কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা এবং অটোমেশনের ব্যবহার এই সফলতার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে।
তিনি আরও জানান, ই-গেট পাস, আধুনিক স্ক্যানিং ব্যবস্থা, অটোমেটেড কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি বন্দরের কার্যক্রমে গতি এনেছে এবং কাগজপত্রের জটিলতা কমিয়েছে।
রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায় ছিল ৬৮ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। এর আগের বছর (২০২২-২৩) রাজস্ব আদায় ছিল ৬১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও ডেপুটি কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, “বছরজুড়ে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের রাজস্ব আদায় ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এটি কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতা এবং আমদানিকারকদের সময়মতো পণ্য খালাসের ফল।”
রফতানিতে নজিরবিহীন অগ্রগতি
বেসরকারি ১৯টি ডিপোর মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রফতানি পণ্যের কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৯৯৪ একক, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৬ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬২। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, “ডলার সংকট হ্রাস, এলসি নিষ্পত্তিতে গতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে রফতানি বেড়েছে।”
চ্যালেঞ্জ ও সতর্কতা
তবে ব্যবসায়ী নেতারা কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরছেন। বাংলাদেশ নন-প্যাকার ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুব রানা বলেন, “ডলার সংকট ও এলসি নিষ্পত্তির জটিলতা পুরোপুরি কাটেনি। এ সমস্যা না কাটলে রফতানি প্রবৃদ্ধি থমকে যেতে পারে।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বলেন,
“গত অর্থবছরে অবরোধ ও পরিবহন সমস্যার কারণে প্রায় দুই মাস বন্দর ও কাস্টমস কার্যত অচল ছিল। এতে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য ডেলিভারি নিতে না পেরে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”
দেশের মোট আমদানি-রফতানির প্রায় ৯২ শতাংশই সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে, যেখানে কনটেইনার পরিবহনের প্রায় ৯৮ শতাংশও এই বন্দরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেই বিবেচনায় এই রেকর্ডসমূহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।