আন্তর্জাতিক নদী ব্যবস্থাপনায় অংশীদার হলো বাংলাদেশ, সীমান্তপারের জলসঙ্কটে নতুন কূটনৈতিক সুযোগ।
প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২৫, ১:৩১:২৯
বাংলাদেশ জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত জলপথ ও আন্তর্জাতিক হ্রদ সুরক্ষা বিষয়ক কনভেনশন বা সংক্ষেপে পানি কনভেনশনে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এবং সামগ্রিকভাবে ৫৬তম সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে কনভেনশনটির অংশ হলো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ নদীনির্ভর বাংলাদেশ। গত সোমবার (২৩ জুন) এই আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশের সদস্যপদ চূড়ান্ত হয়। যদিও ২০১২ সাল থেকেই বাংলাদেশ কনভেনশনটির বিভিন্ন কার্যক্রমে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত ছিল, ২০২৪ সালে স্লোভেনিয়ায় অনুষ্ঠিত পক্ষভুক্তদের (Party) ১০ম সম্মেলনে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা এক নতুন মাত্রা পায়।
কী এই কনভেনশন?
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ জাতিসংঘের আওতায় গৃহীত এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে
প্রথমদিকে ইউরোপ-কেন্দ্রিক এই চুক্তি ২০১৬ সাল থেকে সব সদস্যরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার অন্তত ১৫টি দেশ সদস্য হয়। বাংলাদেশ এবার এই তালিকায় যুক্ত হলো।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: নদী, বিপদ, বাস্তবতা
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি নদীবেষ্টিত ও জলবায়ু সংকটপ্রবণ দেশ, যেখানে ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী চীন, ভারত, নেপাল, ভুটান থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে নামে। এর মধ্যে গঙ্গা (পদ্মা)-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীব্যবস্থা পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ও জটিল ব-দ্বীপ গঠন করেছে।
উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান:
বর্ষাকালে পানি অতিরিক্ত হয়ে জীবন ও ফসল ধ্বংস করে, আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোতে দেখা দেয় তীব্র পানি সংকট। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব ঘটনা আরও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠছে।
কূটনৈতিক গুরুত্ব ও আঞ্চলিক সংলাপের আশা বাংলাদেশের এই সদস্যপদ এখন কেবল একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, বরং আঞ্চলিক পানি কূটনীতি ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ন্যায্য সংলাপের দরজা খুলে দিয়েছে। এই কনভেনশন আইনি, প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশকে জাতীয় ও আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনায় আরও সুসংগঠিত হতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি, যেখানে নদীগুলো আর বিভাজনের দেয়াল নয়, বরং সহযোগিতার সেতু হবে।”
জলবায়ু সংকট ও পানির রাজনীতির উত্তাপে বাংলাদেশের এই কূটনৈতিক অগ্রগতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। আন্তঃসীমান্ত জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন একটি আন্তর্জাতিক স্তরের দায়িত্বশীল অংশীদার। এ অর্জন শুধু পানি নয় শান্তি, প্রতিবেশিতা ও পরিবেশগত ন্যায়ের প্রতীক।