হাইকোর্ট ১১৬ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ বাতিল, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের নির্দেশ
প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:৪৪:৩৬
হাইকোর্ট মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা করেছে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ অবৈধ ও বাতিল। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। এই রায়ের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি এবং শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত ক্ষমতা পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের হাতে চলে এসেছে। আইনজীবীদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় গঠনে আর কোনও বাধা নেই। বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ যথাযথভাবে রুলটি ঘোষণা করেছেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, এবং ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম।
রিট ও মামলা প্রসঙ্গ
২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের নির্দেশনার জন্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছিল বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না। রিটের প্রাথমিক শুনানি হয় ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর। রুলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একইসঙ্গে বিচারের জন্য পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা করা হবে না, রুলে জানতে চাওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরপর হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য দিন নির্ধারণ করে এবং অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়াকে নিয়োগ দেয়।
সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
রিটে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধি সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্বে ছিল। ১৯৭৪ সালের চতুর্থ সংশোধনীতে এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে যায়। পরে পঞ্চম সংশোধনীতে ‘সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রয়োগ হবে’ শব্দগুলো সংযুক্ত হয়। আপিল বিভাগ পরে পঞ্চম সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে বর্তমান ১১৬ অনুচ্ছেদে এটি পুনঃস্থাপন করা হয়। বর্তমান ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (পদোন্নতি, বদলি, ছুটি, শৃঙ্খলাবিধি) রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে প্রয়োগ করা হয়। তবে এর ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।