প্রেম, প্রতিশোধ না কি মানসিক বিকার? প্রতিটি খুনের পেছনে থাকে একটি
প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ১:৪৩:১৮
প্রেম, প্রতিশোধ না কি মানসিক বিকার? প্রতিটি খুনের পেছনে থাকে একটি গল্প আর সেই গল্পের ছায়া পড়ে পুরো সমাজের ওপর।
২০২৪ সালের শেষদিকে ঢাকার উত্তরায় এক তরুণীর খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়। প্রেমিকের হাতে খুন হওয়া সেই তরুণীর ডায়েরির পাতায় লেখা ছিল, "সে বদলে গেছে, আমি ভয় পাই "
তদন্তকারীরা বলছেন, এই একটি ঘটনার পেছনে আমরা যেসব ‘কারণ’ দেখি, সেগুলো শুধু একটির নয় বেশিরভাগ হত্যার ক্ষেত্রেই একেকটি ট্রিগার হয়ে ওঠে।প্রতিদিনের সংবাদের নিচে থাকা শিরোনামগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, খুন এখন আর ব্যতিক্রম নয় এটা ভয়ানক স্বাভাবিকতায় পরিণত হচ্ছে।
তদন্তে উঠে আসা খুনের ৫টি সাধারণ কিন্তু ভয়ংকর কারণ
ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক, জেগে থাকা প্রতিশোধ
“ভালোবাসা থেকেই ঘৃণা, আর ঘৃণাই শেষ পর্যন্ত রক্তপাত।”প্রেমে প্রত্যাখ্যান, অবিশ্বাস কিংবা প্রতারণা এসব থেকে জন্ম নেয় রাগ, দুঃখ আর নিয়ন্ত্রণ হারানো অনুভূতি।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি আলোচিত খুনে দেখা গেছে, ‘ব্রেকআপ’ বা প্রেমিকের সঙ্গে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগই ছিল খুনের প্রধান ট্রিগার।
উল্লেখযোগ্য কেস: চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী সুমাইয়া হত্যাকাণ্ড প্রেমিকের পরিকল্পিত খুন।
কিওয়ার্ড: প্রেমে খুন, প্রতারণা ও সম্পর্ক
পারিবারিক সম্পত্তি রক্তের চেয়েও দামি?
"ভাইয়ের হাতে ভাই খুন জমি আর বাড়ির কাগজের জন্য।”
সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ বহু পুরনো, কিন্তু এখন তা আগের চেয়ে বেশি সহিংস।
অনেক সময় বাবা-মা জীবিত থাকতেই সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়।
উল্লেখযোগ্য কেস: নারায়ণগঞ্জের দুই ভাইয়ের মধ্যে জমি বিরোধে বড় ভাই খুন।
কিওয়ার্ড: পারিবারিক খুন, জমি নিয়ে হত্যা, উত্তরাধিকার সমস্যা
তাৎক্ষণিক রাগ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৃত্যু
“মাত্র ১০ সেকেন্ডের উত্তেজনা কেড়ে নেয় একটি জীবন।”
তদন্ত বলছে, বহু খুন হয় কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই। এক মূহূর্তের উত্তেজনা, অপমান, কিংবা সামান্য ধাক্কাতেই ঘটে যায় খুন।
মনোবিজ্ঞানীরা একে বলেন “ইমপালস কন্ট্রোল ডিজঅর্ডার” যেখানে মানুষ নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।
উল্লেখযোগ্য কেস: গাজীপুরে ট্রাফিক জট নিয়ে বাকবিতণ্ডায় খুন হন এক রিকশাচালক।
কিওয়ার্ড: তাৎক্ষণিক খুন, রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতা
মানসিক বিকার অদৃশ্য খুনির জন্ম
“সে কখনো স্বাভাবিক ছিল না, আমরা বুঝিনি…”
অনেক খুনের পেছনে থাকে অবহেলিত মানসিক অসুস্থতা।
বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, বা পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার যেগুলোর চিকিৎসা না হলে অপরাধ প্রবণতা মারাত্মক রূপ নেয়।
স্টাডি ইনসাইট: মানসিক রোগীদের অপরাধ প্রবণতা নিয়ে ২০২2 সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা বলছে প্রাথমিক চিকিৎসা ও সামাজিক বোঝাপড়ার অভাব এই অপরাধগুলো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কিওয়ার্ড: অপরাধ মনোবিজ্ঞান, মানসিক সমস্যা ও খুন
পেশাদার খুন গ্যাং কালচারের ছায়া
“খুনটা পেশা, টাকার বিনিময়ে জীবন শেষ।”
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, মাদক চক্র, বা প্রতিপক্ষকে সরাতে এখন অনেক ক্ষেত্রেই হায়ার্ড কিলার নিয়োগ দেওয়া হয়।এসব হত্যাকাণ্ড নিখুঁত পরিকল্পনায় হয় কোনও আলামত রাখে না। তদন্ত দীর্ঘ হয়, প্রমাণ মেলে না।
উল্লেখযোগ্য কেস: কুমিল্লায় আলোচিত কাউন্সিলর সোহেল হত্যা মাদকচক্রের সাথে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত।
কিওয়ার্ড: পেশাদার খুন, টার্গেট কিলিং, গ্যাং অপরাধ
সমাজ কী শিখছে, না-কি সহ্য করেই যাচ্ছে?
এত আলোচিত খুন, এত রিপোর্ট, এত বিচারপ্রক্রিয়া কিন্তু খুন কমছে না।
সচেতনতা, সময়মতো মানসিক চিকিৎসা, পরিবারে নৈতিক শিক্ষা আর দ্রুত বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া এই প্রবণতা ঠেকানো অসম্ভব।
“প্রতিটি খুনের পেছনে খুনি একা নয় সমাজ তার অনুযোগে সহযাত্রী।”
আমরা যদি রাগের ভাষা না শিখি, যদি পরিবারে সহানুভূতি না গড়ে তুলি, যদি মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দিই তাহলে খুন নতুন কিছু নয়, বরং একদিন ‘নতুন স্বাভাবিক’ হয়ে উঠবে।