ব্যাংক খাতের কালো অধ্যায় তদন্তে, প্রশ্নবিদ্ধ সাবেক গভর্নর ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা।
প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২৫, ২:৪৩:২০
গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে ঘটে যাওয়া বড় অনিয়ম ও জালিয়াতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর, পাঁচ ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক সাবেক প্রধানসহ অন্তত ১০টি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর তথ্য চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে দুদক উল্লেখ করে, গত দেড় দশকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন কিছু ঋণনীতি প্রণয়ন করেছিলেন, যেগুলো প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও ঋণ খেলাপিদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
যাদের নাম সরাসরি চিঠিতে:
সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ফজলে কবির এবং আব্দুর রউফ তালুকদারের নাম সরাসরি চিঠিতে উল্লেখ করে অভিযোগ তোলা হয়েছে—ঋণ কেলেঙ্কারিতে সহায়তা, হলমার্ক জালিয়াতি, রিজার্ভ চুরি, এস আলম গ্রুপের ঋণ বিতরণসহ বড় দুর্নীতির ঘটনায় ব্যর্থতা কিংবা গোপন সহযোগিতা করেছিলেন তারা।
এছাড়া সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মো. রাজী হাসান, আবু ফারাহ মো. নাসের, কাজী সাইদুর রহমান এবং বিএফআইইউর সাবেক প্রধান এস কে সুরেশ— এদের সময়কার নীতিনির্ধারণ, পরিদর্শন ও অর্থপাচারের ঘটনা নিয়ে আলাদাভাবে তথ্য চেয়েছে কমিশন।
যেসব নথিপত্র চাওয়া হয়েছে:
যেসব ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর তথ্য চাওয়া হয়েছে:
দুদকের অনুসন্ধানে যেসব ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো:
১. বেক্সিমকো
২. যমুনা গ্রুপ
৩. কেয়া গ্রুপ
৪. এমআর গ্রুপ
৫. সিকদার গ্রুপ
৬. বিবিএস গ্রুপ
৭. থার্মেক্স গ্রুপ
৮. আবদুল মোনেম গ্রুপ
৯. এনেটেক্স গ্রুপ
১০. রতনপুর গ্রুপ
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এসব গোষ্ঠীর নামে ও বেনামে নেওয়া ঋণের বিস্তারিত তথ্য, ঋণ পুনঃতফসিল, সুদহার, পুনর্গঠন সুবিধা এবং আদায়সংক্রান্ত নথিপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যে তথ্য দিতেও শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া:
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “ঈদের ছুটি ও দীর্ঘ ১৫ বছরের তথ্য একত্রে সংগ্রহ করা সময়সাপেক্ষ। তবু ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা কাজ করছে।”
তথ্য পাঠানোর সময়সীমা:
দুদক ব্যাংক খাতের এসব নথিপত্র ২৫ জুন সকাল ১১টার মধ্যে জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে সময়মতো সব নথি সংগ্রহ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে কিছু ব্যাংক।
দুদকের পক্ষ থেকে:
চিঠির বিষয়ে দুদকের এক উপপরিচালকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সংক্ষিপ্ত তথ্য (Brief at a glance):
দুদক চিঠিতে সাবেক ৩ গভর্নর, ৫ ডেপুটি গভর্নর এবং বিএফআইইউর এক প্রধানের নাম
বেক্সিমকো, যমুনা, সিকদারসহ ১০ গোষ্ঠীর ঋণ সুবিধার তথ্য চাওয়া হয়েছে
হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, রিজার্ভ চুরির অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনও চাওয়া
চিঠির জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকেও নির্দেশনা দিয়েছে