জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে কার্বন কর আরোপের দিকে।
প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ১১:০১:৫৬
জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে কার্বন কর আরোপের দিকে। বাংলাদেশে কি এই ট্যাক্স বাস্তবায়িত হলে নাগরিকদের ঘাড়ে বাড়তি বোঝা আসবে?
কি এই কার্বন ট্যাক্স?
কার্বন ট্যাক্স হলো এমন একধরনের পরিবেশ কর, যা জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন ইত্যাদি খাতে নির্গত প্রতি টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের জন্য আরোপিত হয়। এই ট্যাক্সের লক্ষ্য হলো দূষণ কমাতে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে গ্রিন প্রযুক্তির দিকে ধাবিত করা।
বিশ্বের পরিস্থিতি: কে কোথায় দাঁড়িয়ে?
সুইডেন: প্রতি টন CO₂ নির্গমনে প্রায় $137 ট্যাক্স আরোপ করেছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ।
চীন: ২০২১ সাল থেকে তাদের জাতীয় কার্বন মার্কেট চালু হয়েছে।
ভারত: কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ‘ক্লিন এনার্জি সেস’ চালু আছে।
বাংলাদেশ: এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কার্বন ট্যাক্স নেই, তবে আলোচনায় রয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য কার্বন ট্যাক্স বাস্তবায়নের সম্ভাব্য প্রভাব:
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়বে: বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮৩% আসে গ্যাস ও কয়লা থেকে। কার্বন ট্যাক্স আরোপ হলে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের মূল্য বাড়তে পারে ১০–২৫% পর্যন্ত।
শিল্পখাত কীভাবে প্রভাবিত হবে: পোশাক, সিমেন্ট, ইস্পাত ও টেক্সটাইল শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জ্বালানিভিত্তিক পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাবে: বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার সব ধরনের ডিজেল-অভিযুক্ত যানবাহনের খরচ বাড়বে। ফলে গণপরিবহন ও পণ্যের দামও বাড়তে পারে।
জ্বালানি অর্থনীতিবিদ ড. ফারুক হাসান বলেন, “কার্বন ট্যাক্স একটি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হলেও, বাংলাদেশে এখনই এটি কার্যকর করলে নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর বড় প্রভাব পড়বে। তাই সাবসিডি ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ নিশ্চিত করে ধাপে ধাপে এটি কার্যকর করতে হবে।”
কার্বন ট্যাক্স না এলে কী সমস্যা?
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ১৫% কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্যারিস চুক্তিতে।
বিনা নিয়ন্ত্রণে কার্বন বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকি, জলবায়ু দুর্যোগ ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
কার্বন ট্যাক্স বাস্তবায়নের উপায়:
ধাপে ধাপে প্রয়োগ: প্রথমে বড় শিল্পে, পরে গ্রাহক পর্যায়ে।
কম আয়ের শ্রেণির জন্য ভর্তুকি: গ্যাস, বিদ্যুতে টার্গেটেড সাবসিডি।
রেভিনিউ রিসাইক্লিং: কার্বন ট্যাক্স থেকে আদায়কৃত অর্থ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ।
গণসচেতনতা: ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিকল্প শক্তির প্রতি উৎসাহ জাগানো।