১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই ডুবলো নগর, খাল-নালার ত্রুটি ও অকার্যকর প্রকল্পে বাড়ছে দুর্ভোগ
প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৪:৩৪
মাত্র ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিতে আবারও তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগর। সোমবার সকালের এই বৃষ্টিতে শহরের অন্তত ১৫ শতাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ৩৪টি সভা সত্ত্বেও এবারও নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার পুরনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে এবং আজ মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
খরচ, কিন্তু সমাধান নয়
সিটি করপোরেশন, সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চারটি প্রকল্পে গত আট বছরে ৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা খরচ হলেও ১৪টি খালের সংস্কার, ১০টি খাল প্রশস্তকরণ এবং ১৪টি স্লুইসগেট নির্মাণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন’ প্রকল্পে ৫ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।
কোথায় কী সমস্যা?
নগরবাসী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পের ত্রুটি, অপ্রস্তুত রক্ষণাবেক্ষণ ও অপরিকল্পিত ময়লা ফেলা খাল-নালাকে অকার্যকর করে তুলেছে। মৌসুমের শুরুতে নালা পরিষ্কার থাকায় জলাবদ্ধতা হয়নি, তবে এখন খাল-নালা আবার ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সরছে না।
আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার বলেন,
পানির জন্য জলাধার বাদ দেওয়ায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পাল্টাপাল্টি দোষ
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “আমরা খাল পরিষ্কার করেছি, কিন্তু নালা-নর্দমা পরিষ্কার হয়নি।”
অন্যদিকে, সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা বলেন, “নালা পরিষ্কার, তবে তীব্র বৃষ্টিতে পানি সরেনি। হিজড়া খালের কাজ শেষ না হওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।”
বারবার সভা, বারবার ব্যর্থতা
গত আট বছরে ৩৪টি সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাহাড় কাটা বন্ধ, জলকপাট চালু, খাল খননের কাজ শেষ করা, এসবই ছিল নির্দেশনার মধ্যে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে সামান্যই। ৩৯টি স্লুইসগেটের মধ্যে চালু হয়েছে মাত্র ২৫টি। বারবার সময় বেঁধে দেওয়া হলেও অধিকাংশ কাজ এখনও অসম্পূর্ণ।
দুর্ভোগের দিন
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত শহরের প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদসহ বহু এলাকা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে ছিল। স্কুলগামী শিশু, কর্মজীবী মানুষ এবং দোকানিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরিবহন সংকট ও ভাড়াবৃদ্ধি ছিল সাধারণ।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহেদ ইসলাম বলেন, “তিন জায়গায় আটকে ছিলাম, সাত-আট কিলোমিটার ঘুরে অফিস যেতে হয়েছে।” একই অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।