আবাসিক এলাকায় টানা ইসরায়েলি হামলা, ধ্বংসস্তূপে চাপা বহু মানুষ
প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২৫, ১০:৫২:৪৯
গাজা যেন রক্তে রাঙা একটি উপত্যকার নাম। ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় আবারও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে অঞ্চলটি। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় কয়েক ডজন বিমান ও ড্রোন হামলায় পুরো গাজা জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, ১২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ৪০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩২ জন শিশু ও ১৮ জন নারী রয়েছে বলে জানা গেছে। খান ইউনুস, রাফা, বেইত লাহিয়া, ও গাজার উত্তরাংশে সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে।
ভেঙে পড়েছে হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
হামলায় বহু ঘরবাড়ি, স্কুল ও ক্লিনিক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। একাধিক হাসপাতালেও সরাসরি হামলা হওয়ায় সেখানে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোপুরি ব্যাহত হচ্ছে।ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অনেক শিশু হাসপাতালে না পৌঁছানোর আগেই মারা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন সংকটে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন,
আমরা শুধু বাঁচিয়ে রাখতে চাই মানুষগুলোকে, কিন্তু চারপাশে শুধু মৃত্যু আর ধ্বংস।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন,
গাজায় বেসামরিক মানুষজন নিরন্তর রক্তপাতের শিকার হচ্ছেন। এটা মানবতাবিরোধী সংকট। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “যেখানে শিশুদের মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপে পড়ে থাকে, সেখানে মানবাধিকার বলে কিছু থাকে না। এই হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল।” ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি এবং আরও অনেক দেশ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মানার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের অবস্থান
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (IDF) এক বিবৃতিতে জানায়, “আমাদের লক্ষ্য সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো, অস্ত্র গুদাম এবং টানেল নেটওয়ার্ক। বেসামরিক হতাহতের জন্য আমরা দুঃখিত, তবে হামাস যেসব স্থাপনায় লুকিয়ে আছে, সেখানে হামলা আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার।” তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কোনো সুনির্দিষ্ট সামরিক উদ্দেশ্য নয়, বরং গাজায় সাধারণ মানুষের মনোবল ভেঙে দেওয়ার কৌশল।
মানবিক সহায়তা পৌঁছানো কঠিন
গাজায় এখন জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, ও বিদ্যুৎ সরবরাহ দরকার। তবে রাফা সীমান্ত বন্ধ থাকায় বাহির থেকে সহায়তা প্রবেশ করছে না।
রেড ক্রিসেন্ট ও জাতিসংঘের মানবিক শাখা UNRWA বলছে,
এই মুহূর্তে প্রতিটি মিনিট মূল্যবান। গাজার মানুষ খাবার পাচ্ছে না, শিশুরা পানি চায়, মায়েরা মৃত সন্তান কোলে নিয়ে বসে আছে।
বিশ্লেষণ: যুদ্ধ নয়, বিপর্যয়
এই মুহূর্তে গাজায় যা হচ্ছে, তা কোনো সাধারণ যুদ্ধ নয় এটা সরাসরি মানবিক বিপর্যয়। শিশুরা স্কুলে না গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছে। হাসপাতালগুলো মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ততা এই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। বিশ্লেষকদের মতে, যদি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি না হয়, এবং যদি কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ না আসে, তাহলে এই রক্তক্ষয় আরও বাড়বে। গাজা হারাবে তার অবশিষ্ট প্রাণশক্তিও।
গাজার আকাশে ধোঁয়া, মাটিতে রক্ত, আর মানুষের চোখে প্রশ্ন“আমাদের অপরাধ কী?”এই প্রশ্নের জবাব না এলে, ইতিহাস আরও একটি নৃশংসতার অধ্যায় লেখা চালিয়ে যাবে।