যাত্রা শুরু হয়েছিল স্বাভাবিক, শেষ হলো ধ্বংসস্তূপে
প্রকাশিত : ১৫ জুন ২০২৫, ১২:২৯:০৯
মোট ২৪২ জন আরোহীর মধ্যে ২৪১ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মাত্র একজন যাত্রী বিষ্ণু কুমার রমেশ, যিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেঁচে আছেন।
হোস্টেলের ছাদে আছড়ে পড়ে প্লেন, সিসিটিভিতে ধরা আতঙ্কের মুহূর্ত: উড়োজাহাজটি আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেল ভবনের উপর সজোরে ধাক্কা দিয়ে আছড়ে পড়ে। স্থানীয় একটি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রানওয়ে দিয়ে উড়োজাহাজটি স্বাভাবিকভাবেই গতি নিয়ে উড়াল দিচ্ছে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরই দেখা যায় এটি পর্যাপ্ত উচ্চতা নিচ্ছে না। সমান্তরালভাবে কিছুদূর ওড়ার পর আকস্মিকভাবে নিচের দিকে নামতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের উড়োজাহাজে উড্ডয়নের পর উচ্চতা না বাড়া একটি মারাত্মক সতর্কসংকেত, যা শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করে।
ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার: তদন্তে নতুন অগ্রগতি দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করা হয় উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্স অর্থাৎ ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (DFDR) ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR)। ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার করা হয় সেই হোস্টেল ভবনের ছাদ থেকে, যেখানে প্লেনটি গিয়ে পড়ে। উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (AAIB)-এর একটি বড় দল এবং গুজরাট সরকারের ৪০ জন কর্মী এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়।
ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে বোঝা যাবে—
এই যন্ত্রগুলো সাধারণত স্টিল ও টাইটেনিয়াম দিয়ে তৈরি হয় এবং চরম দুর্ঘটনার মধ্যেও তথ্য সুরক্ষিত থাকে। দুর্ঘটনার শিকার হওয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি ১২ বছর আগে তৈরি হয়েছিল। এর পূর্ববর্তী ফ্লাইট রেকর্ডেও কোনো গুরুতর সমস্যা পাওয়া যায়নি। উড়াল দেওয়ার মুহূর্তে সব কিছু স্বাভাবিকই ছিল বলে জানানো হয়েছে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সূত্রে। তবে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে
এই দুইয়ের কোনো একটি হতে পারে দুর্ঘটনার কারণ।
আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু, যুক্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য: টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে প্রশিক্ষিত তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। কীভাবে একটি স্বাভাবিক ফ্লাইট বিপর্যয়ে পরিণত হলো, সেটি উদঘাটনই এখন অগ্রাধিকার।” এই তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেফটি বোর্ড (NTSB) এবং বোয়িং কোম্পানির বিশেষজ্ঞরাও যুক্ত হচ্ছেন।
এটাই কি ভারতের সবচেয়ে বড় বিমান বিপর্যয়?
দুর্ঘটনাটি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এর আগে ১৯৯৬ সালের ছত্রসালে ও ২০১০ সালের ম্যাঙ্গালোর দুর্ঘটনায় যে প্রাণহানি ঘটেছিল, তার পরেই আহমেদাবাদ দুর্ঘটনাটি স্থান পাচ্ছে। দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক ও সহানুভূতি জানিয়েছেন এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।