নিরব দায়িত্ববোধ, ত্যাগ আর সাহসের প্রতীক বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন
প্রকাশিত : ১৫ জুন ২০২৫, ২:৪২:১৫
দিবসটি উপলক্ষে আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্তানরা বাবার প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্কুল-কলেজ এবং গণমাধ্যমে এ দিনটিকে ঘিরে আয়োজন করা হচ্ছে আলোচনা, স্মৃতিচারণা ও বিশেষ অনুষ্ঠান।
ইতিহাসের পাতা থেকে: বিশ্ব বাবা দিবসের সূচনা হয় যুক্তরাষ্ট্রে ১৯০৯ সালে। ওয়াশিংটনের সোনোরা স্মার্ট ডড নামের এক তরুণী প্রথম এ উদ্যোগ নেন। তাঁর বাবা, উইলিয়াম স্মার্ট, ছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত, যিনি একাই ছয় সন্তানকে লালন-পালন করেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই দিবস পালনের অনুপ্রেরণা আসে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে ‘ফাদার্স ডে’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ধীরে ধীরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই দিনটি সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পায়।
পরিবর্তনের ধারায় পিতৃত্ব: সময়ের পরিবর্তনে বদলে গেছে পরিবারের কাঠামো, পাল্টেছে বাবার ভূমিকার সংজ্ঞাও। একসময় বাবাদের কাজ ছিল পরিবারের অর্থনৈতিক ভার বহন করা। এখনকার বাবা শিশুর মানসিক বিকাশ, যত্ন ও দৈনন্দিন সান্নিধ্যে সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাবার সক্রিয় অংশগ্রহণ সন্তানের সামাজিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
বাংলাদেশে দিনটির গুরুত্ব: বাংলাদেশে বাবা দিবস পালনের ব্যাপকতা এখনও শহর ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সচেতনতা বাড়ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিনটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, এবং বাবা–সন্তানের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও #BabaKeSalam, #FatherhoodMatters, #HappyFathersDay ট্রেন্ড করছে। সন্তানরা বাবার সঙ্গে ছবি, স্মৃতি কিংবা ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট করছেন। পূর্বে মিডিয়া–বিজ্ঞাপনে ‘মা’–কে ঘিরে আবেগময় প্রচার বেশি দেখা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাবা চরিত্রের গভীরতা তুলে ধরা হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। টিভি বিজ্ঞাপন, ওয়েব সিরিজ এবং সিনেমায় বাবার ত্যাগ, দ্বিধা, নিরব ভালোবাসা এবং সন্তানের জন্য আত্মত্যাগ এখন সাধারণ গল্প নয় সংবেদনশীল বাস্তবতা।
একটি দিনের প্রতীকী গুরুত্ব: বিশেষজ্ঞদের মতে, দিবসটি শুধুই আনুষ্ঠানিক নয়, বরং পিতৃত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, পারিবারিক বন্ধন জোরদার এবং ‘বাবা’–কে সামাজিকভাবে মূল্যায়নের একটি উপলক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা রহমান বলেন, “এই ধরনের দিবস আমাদের ভাবতে শেখায় পরিবারের অভ্যন্তরে নীরব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলোরও সামাজিক স্বীকৃতি থাকা উচিত। বাবা সেই জায়গার প্রতীক।” জীবনের প্রথম হাত ধরার মানুষটি অনেক সময় থেকেই যান ছায়ার মতো। তিনি হয়তো চিৎকার করে ভালোবাসা জানান না, কিন্তু তাঁর স্নিগ্ধ উপস্থিতি থাকে সারাজীবন জুড়ে। বিশ্ব বাবা দিবস তাই কেবল উপহার বা সামাজিকমাধ্যমে পোস্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আত্মোপলব্ধি ও কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন।