নতুন ঝুঁকিতে বিশ্ব
 
                            প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ৪:০৫:৩৪
যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরতে পারে—এমন বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, রাশিয়া ও চীনের পরীক্ষামূলক কর্মসূচির প্রেক্ষিতে ‘সমান ভিত্তিতে’ যুক্তরাষ্ট্রও পরীক্ষা শুরু করবে। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে উচ্চস্তরের বৈঠকের ঠিক আগে এই ঘোষণা আসে। দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার পর এই বৈঠককে স্থিতিশীলতা ফেরানোর ‘মেক-অর-ব্রেক’ মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
ট্রাম্প লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। রাশিয়া দ্বিতীয় আর চীন তৃতীয় হলেও দ্রুত এগোচ্ছে। তাদের পরীক্ষার কারণে আমি যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি—আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষাও শুরু করতে হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এদিকে এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সিএনএন।
এদিকে ট্রাম্প পূর্ণমাত্রার পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরীক্ষা চালানোর কথা বলেছেন নাকি পারমাণবিক অস্ত্রের সিস্টেমের পরীক্ষার কথা বলছেন, তা পরিষ্কার নয়।
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৯২ সালে। এরপর দেশটি স্বেচ্ছায় বিস্ফোরণ পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে বিস্ফোরণ পরীক্ষা শুরু করতে হলে অন্তত ২৪ থেকে ৩৬ মাস সময় লাগবে।
বিশ্বের অন্য তিন প্রধান সামরিক শক্তিও ১৯৯০–এর দশক থেকে পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা চালায়নি। চীনের সর্বশেষ পরীক্ষা ১৯৯৬ সালে।
বিশ্বব্যাপী একটি নতুন শক্তি প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যে চোখে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সম্পর্ক এখন তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ, আর ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে নতুন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে রাশিয়া। চীন ও রাশিয়া—উভয় দেশই আধুনিক পারমাণবিক সক্ষম অস্ত্রের উন্নয়ন ও পরীক্ষায় ব্যস্ত।
সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, দেশটি পারমাণবিক সক্ষম বুরেভেস্টনিক ক্রুজ মিসাইল ও পসেইদন পারমাণবিকচালিত টর্পেডো সফলভাবে পরীক্ষা করেছে।
জানা গেছে, বিশ্বের মোট পারমাণবিক অস্ত্রের ৯০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দখলে।
পেন্টাগন জানিয়েছে, চীন দ্রুত তার পারমাণবিক ভান্ডার বাড়াচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির অস্ত্র সংখ্যা এক হাজারে পৌঁছাতে পারে। তিনটি ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চ কমপ্লেক্সও নির্মাণ করছে চীন।
ট্রাম্পের ঘোষণার সময়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়ার মতো পারমাণবিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র রয়েছে। উত্তর কোরিয়া সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ২০১৭ সালে। ২১শ শতকে পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা করেছে কেবল ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া।
যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার বিস্ফোরণ পরীক্ষা শুরু করে, অন্য দেশও একই পথে হাঁটবে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস–এর হ্যান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘এটি বেপরোয়া সিদ্ধান্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষায় ফিরে গেলে রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান সবাই নিজেদের পরীক্ষার পথেই হাঁটবে।’
চীন বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন পারমাণবিক পরীক্ষা স্থগিত রাখার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং বৈশ্বিক শান্তি ও কৌশলগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
২০২৩ সালের স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন তিন দেশই তাদের পুরোনো পারমাণবিক পরীক্ষাকেন্দ্রে নতুন নির্মাণকাজ, টানেল খনন ও স্থাপনার উন্নয়ন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো ‘নতুন পরীক্ষার প্রস্তুতির ইঙ্গিত’ হতে পারে।