 
                            প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ২:১৩:৫১
উত্তর ক্যারিবীয় অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে হারিকেন মেলিসা। একাধিক দ্বীপে ক্রমেই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। এরইমধ্যে হাইতিতে মেলিসা–সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৮ জন।
অধিকাংশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণাঞ্চলে। এর মধ্যে জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় ভোর থেকে শুরু হয়েছে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ। ভারী যন্ত্র, চেইনসো ও কুড়ালের আওয়াজ পুরো অঞ্চলে। বন্ধ হওয়া রাস্তাগুলো খুলে দিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মী ও স্থানীয়রা। বেঁচে ফেরা মানুষেরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে হেঁটে খুঁজছেন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা মালপত্র। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সিলভেস্টার গুথরি তার সাইকেলের দিকে চোখ রেখে বলেন, ‘এখন আর আমার কোনো ঘর নেই। শুধু এই সাইকেলটাই রক্ষা পেয়েছে। যেখানে আমাদের জমি আছে, সেখানে আবার ঘর তুলব। কিন্তু সাহায্য ছাড়া তা সম্ভব নয়।’
জরুরি ত্রাণবাহী উড়োজাহাজ ইতোমধ্যে জ্যামাইকার প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে, বুধবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দর চালু হওয়ার পর থেকেই ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। পানি, খাদ্য ও জরুরি সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুর্গতদের কাছে।
গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আশ্রয় এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত শেরিল স্মিথ বলেন, ‘আমি এখন গৃহহীন, কিন্তু জীবিত আছি, এটাই আশা জোগাচ্ছে।’
জ্যামাইকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস জানান, ব্ল্যাক রিভার উপকূলে প্রায় ৯০ শতাংশ ঘরের ছাদ উড়ে গেছে। ব্ল্যাক রিভারই এখন ধ্বংসের কেন্দ্রবিন্দু। মানুষ এখনো ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
দুর্যোগের কারণে পশ্চিম জ্যামাইকার ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। এছাড়া পুরো দ্বীপের ৭৭ শতাংশ এলাকা এখনো বিদ্যুৎহীন।
মঙ্গলবার ঘণ্টায় ২৯৫ কিলোমিটার (১৮৫ মাইল) বেগে জ্যামাইকার ওপর আঘাত হানে ক্যাটাগরি–৫ পর্যায়ের হারিকেন মেলিসা। তবে বুধবার সকালে দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–৩-এ নেমে পূর্ব কিউবায় আঘাত হানে হারিকেনটি।
এর মধ্যে কিউবায় সেনাবাহিনী ও ভারী যন্ত্রপাতির সহায়তায় সড়ক পরিষ্কারের কাজ চলছে। দুর্গম এলাকায় আটকেপড়া মানুষকেও উদ্ধার করা হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স আগেই ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ায় দেশটিতে কোনো প্রাণহানি হয়নি। এখন অনেকেই ধীরে ধীরে ঘরে ফিরছেন।
বুধবার রাত পর্যন্ত দক্ষিণ–পূর্ব বাহামা, মধ্য বাহামা ও বারমুডার জন্য হারিকেন-সতর্কতা জারি ছিল। দক্ষিণ–পূর্ব বাহামায় ঝড়ো পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে, বহু মানুষ সেখানেও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন মতে, বৃহস্পতিবার রাতে মেলিসা বারমুডার কাছ দিয়ে পশ্চিম দিক হয়ে অতিক্রম করতে পারে। সেসময় আবারও কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করতে পারে ঝড়টি, তবে এরপর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বে।