 
                            প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২:০৭:৩৫
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনের ঐতিহাসিক শনিওয়ারওয়াড়া দুর্গে নামাজ আদায় করেছিলেন মুসলিম নারীরা। পরে নামাজ আদায়ের সে স্থানেই গোমুত্র ঢেলে ‘শুদ্ধি কর্মসূচি’ পালন করে হিন্দু সংগঠনগুলো। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজেপি সংসদ সদস্য মেধা কুলকার্নির নেতৃত্বে হিন্দু সংগঠনগুলো এই ‘শুদ্ধিকরণ কর্মসূচি’ পালন করে। এটি ঘিরে মহারাষ্ট্রে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মুসলিম নারী দুর্গের ভেতরে নামাজ আদায় করছেন। পরদিন কুলকার্নি ও তার অনুসারীরা ওই স্থানে গিয়ে ‘গোমূত্র’ ছিটিয়ে জায়গাটি ‘পরিশুদ্ধ’ করেন এবং শিব বন্দনা করেন।
মেধা কুলকার্নির দাবি, ‘শনিওয়ারওয়াড়া মারাঠা সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যের প্রতীক। সেখানে নামাজ পড়া দুঃখজনক ও অপমানজনক। প্রশাসনের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিব বন্দনা করেছি এবং স্থানটি শুদ্ধ করেছি। আমরা গেরুয়া পতাকা তুলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কর্মকর্তারা বাধা দেন। এই লোকেরা যেকোনো জায়গায় নামাজ পড়ে তা ওয়াকফ সম্পত্তি বলে দাবি করে। হিন্দু সমাজ এখন সতর্ক।’
মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নীতেশ রানে বলেন, ‘শনিওয়ারওয়াড়া সাহসের প্রতীক, হিন্দুদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। যদি হিন্দুরা হাজি আলিতে হনুমান চালিশা পাঠ করে, তাহলে মুসলমানদের অনুভূতি কি আঘাত পাবে না? নামাজ পড়তে হলে মসজিদে যান।’
অন্যদিকে ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) মুখপাত্র রূপালী পাতিল পুলিশের কাছে কুলকার্নির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তিনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন। পুনেতে হিন্দু–মুসলমানরা শান্তিতে বসবাস করে, কিন্তু তিনি বিভাজন তৈরি করছেন।’
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের (এআইএমআইএম) নেতা ওয়ারিস পাঠান বলেন, ‘বিজেপি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ধ্বংস করছে। তিন–চারজন মুসলিম নারী তিন মিনিট নামাজ পড়লে তাতে কী ক্ষতি হলো? সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। আগে নিজেদের মন শুদ্ধ করুন, জায়গা নয়।’
এদিকে, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে নামাজ পড়া অজ্ঞাতপরিচয় নারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্গে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।
পুনে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এএসআইয়ের সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ শনিওয়ারওয়াড়া। আমরা এএসআইয়ের অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কেউই ভেতরের সীমানা বা রেলিং অতিক্রম করতে পারবে না। নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি হবে না।’