 
                            প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৬:৪৫:০৬
সোমবার সকালে বিষাক্ত ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে যায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দূষণ ছাড়িয়ে যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত বায়ু দূষণের মাত্রার নিরাপদ সীমার ১৬ গুণ। এ নিয়ে মহাভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বসবাসের এই মহানগর এলাকা প্রতিবছরই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে থাকে। শীত মৌসুমে ঠান্ডা বাতাসের কারণে ধোঁয়া ও ধুলাবালি মাটির কাছেই আটকা পড়ে, ফলে ধান পোড়ানো, কারখানার ধোঁয়া ও যানবাহনের নির্গমন মিলিয়ে তৈরি হয় প্রাণঘাতী দূষণের মিশ্রণ।
এ বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে দীপাবলি উৎসবের আতশবাজির কারণে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান এই উৎসবকে কেন্দ্র করে টানা কয়েক দিন ধরে আতশবাজি ফোটানো হয়, যার প্রভাব সোমবার রাতে চরমে পৌঁছায়।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ মাসের শুরুতে সবধরনের আতশবাজিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে ‘গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার’ ব্যবহারের অনুমতি দেয়, যেগুলো তুলনামূলকভাবে কম ধোঁয়া নির্গত করে। তবে আগের বছরগুলোর মতো এবারও অনেকেই এই নিয়ম মানেনি।
পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ার জানিয়েছে, সোমবার দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় পিএম২.৫ কণার মাত্রা ঘনমিটারপ্রতি ২৪৮ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছায়, যা ফলে ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষুদ্র কণিকা হিসেবে মানবদেহে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে।
সরকারের এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট কমিশন জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে দূষণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে ডিজেল জেনারেটর ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
এ ছাড়া দিল্লি প্রশাসন প্রথমবারের মতো মেঘে লবণ বা রাসায়নিক ছিটিয়ে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি তৈরির (ক্লাউড সিডিং) প্রযুক্তি পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে, যাতে বাতাস পরিষ্কার করা যায়।
রাজ্যের পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। উড্ডয়ন পরীক্ষা ও পাইলটদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।’
গত বছর প্রকাশিত দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ-এর এক গবেষণায় বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে বায়ু দূষণজনিত কারণে ৩৮ লাখ মানুষ মারা গেছেন।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ) সতর্ক করেছে, দূষিত বাতাস শিশুদের তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।