 
                            প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১:০২:১৭
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ‘নো কিংস’ নামে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মায়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বড় শহরগুলোতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্ক সিটির বিখ্যাত টাইমস স্কয়ারে জনতার ঢল নামে। ‘ডেমোক্রেসি নট মোনার্কি’ ও ‘দ্য কনস্টিটিউশন ইজ নট অপশনাল’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে মানুষ শ্লোগান দিচ্ছে—‘দিস ইজ হোয়াট ডেমোক্রেসি লুকস লাইক’।
এদিকে, বিক্ষোভের আগে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করে, এসব কর্মসূচির পেছনে বামপন্থি সংগঠন ‘অ্যান্টিফা’র হাত রয়েছে। তারা একে ‘ঘৃণামূলক মার্কিনবিরোধী সমাবেশ’ বলে আখ্যা দেয়।
তবে আয়োজকেরা জানান, সব শহরেই বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। যদিও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল।
জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ভেঙে ফেলা, গভর্নরদের আপত্তি সত্ত্বেও ন্যাশনাল গার্ডকে মোতায়েনসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে মামলা করতেও আহ্বান জানিয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, এসব পদক্ষেপ মার্কিন সংবিধান ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, দেশ পুনর্গঠনের স্বার্থেই তিনি এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এছাড়া ‘স্বৈরাচার’ বা ‘রাজতান্ত্রিক আচরণের’ অভিযোগকেও তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
ফক্স নিউজে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘ওরা বলছে আমি রাজা। এটা কোনো অভিনয় নয়, আমি রাজা নই।’
নিউইয়র্ক পুলিশ জানায়, শহরের পাঁচটি এলাকার বিভিন্ন স্থানে এক লাখের বেশি মানুষ জড়ো হয়। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ফ্রিল্যান্স লেখক বেথ জাসলফ বলেন, ‘আমাদের দেশে ফ্যাসিবাদ ও একনায়কতন্ত্রের দিকে যাত্রা চলছে। আমি এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চেয়েছি।’
নিউ জার্সির বাসিন্দা ৬৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মাসিমো মাসকোলি জানান, ‘আমেরিকা এখন ইতালির গত শতকের পথেই হাঁটছে। সরকারের ওপর জনগণের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।’
ওয়াশিংটন ডিসিতেও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এক প্রতিবাদকারীর হাতে দেখা যায় ‘আই অ্যাম অ্যান্টিফা’ লেখা পোস্টার। ৭৬ বছর বয়সি চাক ইপস বলেন, ‘অ্যান্টিফা’ মানে শান্তি, ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিকতা। এই মূল্যবোধে আমি বিশ্বাসী।
বিক্ষোভে যোগ দেন বহু ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক। সিনেটর চাক শুমার সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমেরিকায় কোনো রাজা নেই। আমরা একনায়কতন্ত্র মেনে নেব না।’
মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ওয়াশিংটনে এক ভাষণে বলেন, ‘আমরা আমেরিকাকে ঘৃণা করি না, বরং ভালোবাসি বলেই রাস্তায় নেমেছি।’
সিনেটর কোরি বুকার, অ্যাডাম শিফ ও ক্রিস মারফি সামাজিকমাধ্যমে প্রতিবাদকারীদের ধন্যবাদ জানান। মারফি লেখেন, ‘এটাই গণতন্ত্রের চেহারা। হয়তো আজকের দিনটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়ে থাকবে।’
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপের বার্লিন, মাদ্রিদ, রোম ও লন্ডনেও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে শতাধিক মানুষ জড়ো হন। টরন্টোতেও বিক্ষোভ হয়। সেখানে ব্যানারে লেখা ছিল ‘হ্যান্ডস অফ কানাডা’।
রয়টার্স/ইপসস জরিপ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ৪০ শতাংশে নেমেছে, আর বিরোধিতা ৫৮ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি তার প্রথম মেয়াদের গড় জনপ্রিয়তার সমান হলেও, দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর সময়ের ৪৭ শতাংশ অনুমোদনের তুলনায় কম।