 
                            প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১:১৩:১০
গাজাগামী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মানবিক সহায়তাকারী জাহাজ আটকের পর সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাকে ইসরায়েলি পতাকায় চুমু দিতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। সুমুদ ফ্লোটিলার মানবাধিকার কর্মীদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যেই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ব্যানারে জাহাজে করে গাজার উদ্দেশে যাওয়া ১৩৭ জন মানবাধিকার কর্মীকে ইসরায়েল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার তারা তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে তুরস্কের ৩৬ জন নাগরিক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, জর্ডান ও অন্যান্য দেশের কর্মীরা রয়েছেন।
এর মধ্যে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেটা থুনবার্গকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করেছে।
তুর্কি সাংবাদিক এবং সুমুদ ফ্লোটিলার অংশগ্রহণকারী এরসিন সেলিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলি বাহিনীকে গ্রেটা থুনবার্গের ওপর নির্যাতন করতে দেখেছেন। এও দেখেছেন, কীভাবে থুনবার্গকে মাটিতে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং ইসরায়েলি পতাকায় চুম্বন করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
হেলমি নামের এক কর্মী বলেন, 'এটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ছিল। তারা আমাদের সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করেছে। খাবার, নিরাপদ পানি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে বঞ্চিত করেছে।'
বিউভার নামের এক মার্কিন কর্মী জানান, থুনবার্গের সঙ্গে ভয়াবহ ব্যবহার করা হয়েছে। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি এবং জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির যখন প্রবেশ করেন, তখন থুনবার্গকে জোর করে একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইতালীয় সাংবাদিক লরেঞ্জো আগোস্তিনো বলেন, 'গ্রেটা থুনবার্গ একজন সাহসী নারী, তার বয়স মাত্র ২২। তাকে অপমান করা হয়েছে এবং তার গায়ে একটি ইসরায়েলি পতাকা মুড়িয়ে ট্রফির মতো করে প্রদর্শন করা হয়েছে।'
তুরস্কের টিভি উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার বলেন, 'তারা আমাদের তিনদিন না খাইয়ে রেখেছে। পানি দেয়নি, টয়লেট থেকে পানি খেতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে।'
তুর্কি কর্মী আইসিন কান্তোগলু বলেন, 'বন্দিশালার দেয়ালে রক্তের দাগ ও আগের বন্দিদের লেখা বার্তা দেখা গেছে। দেখেছি, মায়েরা তাদের সন্তানদের নামও লিখে রেখেছেন। আমরা যেন কিছুটা হলেও ফিলিস্তিনিদের মতো অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।'
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা আদালাহ জানিয়েছে, বন্দিদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হ্যান্ডকাফ পরিয়ে হাঁটুগেঁড়ে বসিয়ে রাখা হয়। তাদের ওষুধ দেওয়া হয়নি এবং আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছে। এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আদালাহ'র সব অভিযোগ মিথ্যা। সব বন্দিকে পানি ও খাবার দেওয়া হয়েছে। তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগের অধিকারও রক্ষা করা হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার উদ্দেশে ত্রাণ বহন করা প্রায় ৪০টি নৌকা আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। এছাড়া নৌকাগুলোতে থাকা ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়। এই অভিযানের পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনা আরও বেড়েছে।