শেষ মুহূর্তে পাল্টে দিলেন ম্যাচের চিত্র!
প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ৩:১০:১৬
ম্যাচের মাত্র ৭৫ মিনিটে স্টেডিয়াম যেন থমকে গেল। দর্শকদের চোখে আলো, কণ্ঠে গর্জন, আর সবকিছুর কেন্দ্রে একজনই লিওনেল মেসি। বয়সের ছাপ পড়লেও ক্লাসের কোনো কমতি নেই। তার নেতৃত্বে ইন্টার মায়ামি ৩–১ গোলে হারাল আটলান্টা ইউনাইটেডকে।ম্যাচে একটি গোল, দুটি অ্যাসিস্ট, আর মাঠজুড়ে অসাধারণ উপস্থিতি দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন ‘রাজা’ এখনো রাজত্ব করছেন।
সময়ের সঙ্গে আরও ধারালো মেসি: প্রথমার্ধেই ম্যাচে প্রভাব ফেলেন মেসি। ২২তম মিনিটে তার নিখুঁত ক্রস থেকে গোল করেন জোসেফ মার্টিনেজ। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে একটি দুর্দান্ত আউটসাইড শটে নিজেই বল জড়ান জালে। শেষদিকে দ্বিতীয় অ্যাসিস্টে নিশ্চিত করেন দলের জয়।মাঠে তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে এটাই তার ৩৮ বছর বয়সে খেলা মৌসুম। বল পায়ে নিয়ন্ত্রণ, প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বিভ্রান্ত করার কৌশল এবং দুর্দান্ত ম্যাচ রিডিং সব মিলিয়ে ম্যাচের একমাত্র পূর্ণতা ছিলেন তিনি।
তরুণদের চোখে অনুপ্রেরণার নাম মেসি
মায়ামি ইউনিভার্সিটির ক্রীড়া বিশ্লেষক জনাথন কোরডোভা বলেন “মেসি কেবল খেলেন না, নেতৃত্ব দেন। এই বয়সে যখন অনেকে অবসরের কথা ভাবেন, তিনি তখনও তরুণদের শেখাচ্ছেন কিভাবে পরিশ্রম আর কৌশলে সেরা থাকা যায়।” এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে ম্যাচ শেষে মেসি বলেন “আমি উপভোগ করছি। নতুন পরিবেশ, নতুন চ্যালেঞ্জ। আমি জানি অনেকে আমাকে দেখে প্রেরণা পায়, তাই মাঠে নিজের সেরাটা দিতেই চাই।”এই বক্তব্য তরুণদের মধ্যে ‘সারভাইভাল মাইন্ডসেট’ তৈরি করে। নিজের সীমাবদ্ধতা ভেঙে বড় কিছু করার সাহস জোগায়।
মেসি আমাদের ব্রেন
দলের কোচ হার্ভে নেভিল বলেন “মেসি আমাদের দলের হৃদপিণ্ড। তিনি মাঠে যেমন পারফর্ম করেন, মাঠের বাইরেও তেমনই নেতা। তার উপস্থিতিই দলের পারফরম্যান্সকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়।”এই প্রশংসা কেবল তার খেলোয়াড়ী দক্ষতার নয়, বরং বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বেরও।
মাঠে মেসির উপস্থিতি
বল কন্ট্রোল: ৯২% সঠিক পাস
অ্যাসিস্ট: ২টি
গোল: ১টি
ড্রিবল সফলতা: ৮০%
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নির্বাচিত
এই পরিসংখ্যান শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং ‘স্মার্ট পারফরম্যান্স’-এর বাস্তব উদাহরণ। যা তরুণদের শেখায় কিভাবে নিজের সেরা ভার্সন তুলে ধরা যায় প্রতিনিয়ত।
স্টেডিয়ামজুড়ে একটাই নাম
ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের বাইরে কানায় কানায় পূর্ণ ভক্তদের ভিড়। অনেকে এসেছেন শুধুমাত্র মেসিকে একনজর দেখতে। দর্শক স্যামুয়েল হপকিন্স বলেন “মেসির প্রতিটি ছোঁয়ায় ম্যাজিক। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে এসেছি যাতে সে শেখে কিভাবে একজন মানুষ হয়ে ওঠে কিংবদন্তি।”এভাবেই একজন ক্রীড়াবিদের ‘ইনফ্লুয়েন্স’ ছড়িয়ে পড়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
এমএলএসের বদলে যাওয়া গতি
মেসির আগমনের পর মেজর লিগ সকার (MLS)-এ দর্শকসংখ্যা, টিভি রেটিং এবং আন্তর্জাতিক আগ্রহ বেড়েছে দ্বিগুণ। বিশ্ব মিডিয়া বলছে, “Messi is not just playing, he's elevating American soccer.”
বাংলাদেশি ফুটবল বিশ্লেষক রাফি আনোয়ার বলেন “মেসি মাঠে যা করছেন, তা কেবল মায়ামির জন্য নয়, গোটা লিগের মর্যাদা বাড়াচ্ছে। এটাই 'ইনফ্লুয়েন্সার' শব্দের প্রকৃত ব্যাখ্যা।”
মেসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি, তবে মাঠে তার ফর্ম, ফিটনেস এবং পারফরম্যান্সে কোনো ঘাটতি নেই। অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, ২০২৬ বিশ্বকাপে তিনি আবারও আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে নামবেন। সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী হুয়ান ভারন বলেন “মেসি অবসর নেননি, কারণ তিনি জানেন এখনো বিশ্বকে দেখানোর মতো অনেক কিছু তার বাকি রয়েছে।”
ক্লাস পার্মানেন্ট, বয়স সাময়িক
লিওনেল মেসি হয়তো বয়সে প্রবীণ, কিন্তু ফুটবলে তার মুন্সিয়ানা এখনো তরতাজা। তিনি কেবল গোল করেন না, অনুপ্রাণিত করেন।এই জয় শুধুই তিন পয়েন্ট নয়, বরং তরুণদের জন্য শিক্ষা, আশাবাদ এবং এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি জীবনে কীভাবে প্রতিটি ম্যাচে সেরাটা দিতে হয়।