অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিলেন বাংলাদেশের নতুন বিস্ময়।
প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ২:৫৭:৩৫
তিন বলে তিন উইকেট!: ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত যুব এশিয়া কাপের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে বল হাতে দুর্দান্ত ঝলক দেখান রায়হান। ইনিংসের ৩৭তম ওভারে পরপর তিন বলে তুলে নেন তিনটি উইকেট। ব্যাটসম্যানদের ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়ে কাঁপিয়ে দেন গোটা ব্যাটিং লাইনআপ।
তাঁর হ্যাটট্রিকটি ছিল এমন:
প্রথম বল: ইনসুইং ইয়র্কার—বোল্ড
দ্বিতীয় বল: শর্ট বল—ক্যাচ
তৃতীয় বল: লেংথ ডেলিভারি—এলবিডব্লিউ
কেবল স্কিল নয়, প্রতিটি বলেই ছিল মানসিক দৃঢ়তা ও লক্ষ্য নির্ধারণের স্নায়ু যুদ্ধ।
“রায়হান ভবিষ্যতের ব্র্যান্ড”
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ট্যালেন্ট হান্ট বিভাগের প্রধান রকিবুল হাসান বলেন “রায়হান আমাদের ভবিষ্যতের ব্র্যান্ড। তার বোলিংয়ে যে গতি, নিখুঁত লাইন-লেন্থ এবং আগ্রাসী মানসিকতা আমরা দেখেছি, তা জাতীয় দলকেও অনুপ্রাণিত করবে।” এই ধরণের ইতিবাচক মানসিক শক্তিকে বলা হয় NLP-তে positive affirmation, যা তরুণ খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হাফপ্যান্টে খেলা শুরু, স্বপ্ন ছিল শের-ই-বাংলায় নামার
রায়হান হাসানের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের পটিয়ায়। মাঠ বলতে ছিল ধানক্ষেতের পাশে ছোট্ট একটা খালি জায়গা, আর বল ছিল টেপ টেনিস। সেখান থেকেই শুরু, এরপর স্থানীয় কোচের নজরে আসা, জেলা দলে জায়গা পাওয়া এবং আজ এই জায়গা।তাঁর বাবা একজন মাছ ব্যবসায়ী। অনেক কষ্টে ছেলেকে খেলার সরঞ্জাম কিনে দিয়েছেন। রায়হান বলেন “জানি আমি সেরা না, কিন্তু প্রতিদিন উন্নতির চেষ্টা করি। স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ দলের জার্সিতে মাঠে নামা। আজকের হ্যাটট্রিক সেই স্বপ্নের দিকেই এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।” এই ‘নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা’ নীতিই তাকে আলাদা করে তুলেছে এটি NLP-র অন্যতম মূলস্তম্ভ।
রায়হানের হ্যাটট্রিক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্লেষক ও সাবেক জাতীয় পেসার শহীদু রহমান বলেন “বয়স ১৭ হলেও রায়হানের শরীরী ভাষা ২৫ বছরের পেসারের মতো। মাঠে তার উপস্থিতি, প্রতিটি ডেলিভারিতে ফোকাস আর হ্যাটট্রিকের সময় যে স্থিরতা দেখিয়েছেন, তা অসাধারণ।” তরুণ বয়সে এমন নির্ভরতা গড়ে তোলা খুব কঠিন। এতে বোঝা যায়, রায়হান কেবল প্রতিভাবান নন, মস্তিষ্ক দিয়েও ক্রিকেট খেলতে জানেন।
দেশজুড়ে উচ্ছ্বাস
ম্যাচ শেষ হতেই টুইটার, ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়ে যায় রায়হানের বোলিং স্পেল। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও প্রশংসা করতে ভোলেননি। তাসকিন আহমেদ লিখেছেন “ছেলেটার মধ্যে আগুন আছে। ঠিকঠাক গড়ে তুললে ভবিষ্যতে ভয়ংকর হয়ে উঠবে।” এই ধরনের পাবলিক রিকগনিশন তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য মোটিভেশন বুস্ট হিসেবে কাজ করে, যা NLP ভাষায় external anchoring stimulus বলা হয়।
তরুণদের কাছে রায়হান
ঢাকার ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থী ফাহমিদা ইসলাম বলেন “রায়হান দেখিয়ে দিয়েছে, শুধু ঢাকার ছেলেরা নয়, মফস্বলের সন্তানরাও পারে ইতিহাস গড়তে। তার বোলিংয়ে আমি নিজের স্বপ্ন খুঁজে পাই।” এই মন্তব্য অনেক তরুণকে অভ্যন্তরীণভাবে প্রভাবিত করবে, যা NLP টার্গেট অডিয়েন্সের মনে 'self-belief' তৈরি করে।
হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্পে ডাক
বিসিবি নিশ্চিত করেছে, রায়হানকে দ্রুতই হাই পারফরম্যান্স (HP) ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেখানে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপের মাধ্যমে তাকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা হবে। HP কোচ গ্রান্ট লুডেন বলেন “তাঁর মধ্যে আছে দুর্দান্ত মানসিক দৃঢ়তা। এই বয়সে যারা চাপ সামলে এমন ডেলিভারি দিতে পারে, তারা বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করতে পারে।”
হ্যাটট্রিক নয়, এক নতুন যুগের শুরু
রায়হান হাসানের হ্যাটট্রিক কেবল একটি ম্যাচের পরিসংখ্যান নয়, এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সম্ভাবনার নতুন দ্বার। এই বয়সে এমন উচ্চতায় পৌঁছানো তরুণদের দেখায় যে সীমাবদ্ধতা নেই, যদি ইচ্ছা থাকে।তরুণদের কাছে রায়হান এখন এক অনুপ্রেরণা। তার বল ঘূর্ণায়মান কেবল উইকেটেই নয়, দেশের ভবিষ্যতের দিকেও।