“যেখানে বাকিরা থেমে যায়, সেখানে থেকেই রিয়াল মাদ্রিদ শুরু করে।”
প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ২:২০:৪২
আপনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়ালের শেষ রাতের সেই রুদ্ধশ্বাস জয়ের কথা ভাবেন। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে হাজারো দর্শকের সামনে ইতিহাস গড়ে ১৫তম বারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট উঠেছে রিয়ালের মাথায়।ম্যাচে প্রথমার্ধে পিছিয়ে থেকেও যেভাবে কামব্যাক করল লস ব্লাঙ্কোসরা, তাতে ফুটবল কেবল খেলা নয় একটি আবেগ, এক ধরনের মানসিক অনুপ্রেরণা এই সত্যই যেন প্রতিষ্ঠিত হলো।
আত্মবিশ্বাসী শটে নতুন ইতিহাস
৭৮তম মিনিটে যখন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বলটি জালে পাঠালেন, তখন গোটা স্টেডিয়াম থমকে গেল। মাঠে, গ্যালারিতে, টেলিভিশনের সামনে থাকা কোটি ভক্তের হৃদয়ে যেন একই সঙ্গে আঘাত ও আনন্দ ধাক্কা খায়। ভিনিসিয়ুস পরে ম্যাচ শেষে বলেন “রিয়াল কখনো হারে না, শুধু ফিরে আসে। আমরা জানতাম সুযোগ আসবে, আমরা প্রস্তুত ছিলাম।” এই বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ একটি NLP স্ট্র্যাটেজি ভবিষ্যতের ঘটনাকে ইতিবাচকভাবে কল্পনা করা এবং আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দেওয়া।
প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটির হতাশা
সিটির প্রথমার্ধের দাপট ও গোলের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার হয়তো রিয়ালের দৌড় থেমে যাবে। কিন্তু ফুটবলের নিয়ম রিয়াল মানে না। তারা খেলে সময়ের বিরুদ্ধে, খেলে নিজের বিশ্বাসে। সিটির মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে ম্যাচ শেষে বলেন: “তারা একমাত্র দল যারা ৯০ মিনিট পরও মনে করে তারা জিতবে। এই বিশ্বাসটাই তাদের আলাদা করে।”
রিয়ালের পেছনের নিঃশব্দ কারিগর
এই দলটার পিছনে যিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন নিঃশব্দে, তিনি হলেন কার্লো আনচেলত্তি। যিনি ৫ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে এখন সর্বকালের সবচেয়ে সফল কোচ। তিনি বলেন “আমি খেলোয়াড়দের বলেছিলাম ভালোবাসা দিয়ে খেলো, ভয় নয়। কারণ ভালোবাসা সাহস জোগায়, আর ভয় কেবলই হারিয়ে দেয়।” এই কথার মধ্যে গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। NLP-তে এটিকে বলা হয় positive emotional anchoring যা খেলোয়াড়দের মস্তিষ্কে ইতিবাচক বার্তা গেঁথে দেয়। রিয়ালের ক্যামব্যাক ডিএনএ: ফুটবল বিশ্লেষক সামি হোসেন বলেন, “রিয়াল এমন এক দল যারা স্কোরবোর্ড দেখে খেলেনা, দেখে নিজেদের লক্ষ্য। এই মানসিকতা ১৭-৩০ বছর বয়সী তরুণদের শেখার মতো।”
রিয়াল বনাম সিটি
রিয়াল যেখানে আবেগ, ঐতিহ্য আর মনস্তত্ত্বে খেলেছে, সিটি খেলেছে পরিসংখ্যান আর স্ট্র্যাটেজিতে। তাই রিয়ালের জয় শুধুই স্কোর নয়, এটি একটি দর্শনের জয়। প্রাক্তন রিয়াল কিংবদন্তি ক্যাসিয়াস বলেন, “এই দলটি আমাদের শেখায়, কোনো কিছুই শেষ নয় যতক্ষণ না শেষ বাঁশি বাজে।”
একটি ঐতিহাসিক ম্যাচের মুহূর্তগুলো
প্রথমার্ধে সিটির গোল: ২৭তম মিনিটে হালান্ডের গোলে এগিয়ে যায় সিটি।
দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালের রূপান্তর: মিডফিল্ডে কৌস-ভেলভার্দে-চুয়ামেনির দাপট।
৭৮ মিনিটে সমতা: জুড বেলিংহ্যাম থেকে বল পেয়ে ভিনিসিয়ুসের গোল।
৮৭ মিনিটে নাটকীয় জয়: কর্নার থেকে মিলিটাওয়ের হেড, জয় নিশ্চিত।
তরুণদের কাছে রিয়াল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও রিয়াল সমর্থক ফারহান সজীব বলেন, “এই ম্যাচ আমাকে শিখিয়েছে, জীবনে যখনই হারিয়ে যাব মনে হবে, তখন নিজেকে মনে করাতে হবে আমি রিয়াল মাদ্রিদের মতো ফিরতেও পারি।” এই অনুভবগুলোই NLP টার্গেট অডিয়েন্সের মধ্যে আস্থার বীজ বোনে।
রিয়ালের ১৫তম শিরোপা
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৫টি শিরোপা, যা ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে একক সর্বোচ্চ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, এসি মিলান কারো কাছেই নেই এমন ধারাবাহিকতা। রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বলেন, “রিয়াল কেবল একটি ক্লাব নয়, এটি একটি অনুভূতি। যতবারই সবাই আমাদের শেষ ভাববে, আমরা শুরু করব।”
ফিরে আসার গল্পগুলোই ইতিহাস গড়ে
রিয়াল মাদ্রিদের এই জয় কেবল একটি ম্যাচের জয় নয়, এটি একটি দর্শনের জয় যেখানে বিশ্বাস থাকে, ‘আমরা পারব’। এটি সেই দর্শন যা তরুণ সমাজকে শেখায় শেষ বলতে কিছু নেই, যদি নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকে।এই ম্যাচের গল্পে আপনি যদি নিজেকে খুঁজে পান, তাহলে বুঝবেন রিয়াল আপনাকে জিততে শিখিয়েছে জীবনের মাঠেও।