ইতিহাসের সিংহাসনে বসা এক মহাতারকা।
প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ১:৫৪:২৬
একজন খেলোয়াড় কতদূর যেতে পারেন? খেলার মাঠে শুধু গোল করলেই কি তাঁকে কিংবদন্তি বলা যায়? উত্তর খুঁজতে হলে তাকাতে হয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দিকে। সৌদি প্রো লিগে আল নাসরের হয়ে সম্প্রতি ক্যারিয়ারের ৯০০তম গোল করে এই পর্তুগিজ তারকা কেবল একটি সংখ্যা অর্জন করেননি তিনি পৌঁছে গেছেন এক কিংবদন্তির চূড়ায়।ফুটবল ইতিহাসে এমন কীর্তি আগে কখনও দেখা যায়নি। পেলে, মেসি, রোমারিও কিংবা ইব্রাহিমোভিচ কারো গোল সংখ্যা রোনালদোর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না। এটি কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি মানসিক শক্তির প্রতিচ্ছবি।
‘আমি এখনও শেষ হইনি’
৯০০তম গোলের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রোনালদোর জবাব ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও আত্মবিশ্বাসে ভরা: "আমি এখনো ক্ষুধার্ত। এই ৯০০ গোল আমার শেষ নয়, বরং নতুন শুরুর সিঁড়ি। আমি নিজেকে প্রমাণ করে যেতে চাই দিন শেষে আমি শুধু একজন গোলস্কোরার নই, আমি একজন যোদ্ধা।" এই বক্তব্যে মিশে আছে নিউরোলিংগুইস্টিক প্রভাব এটি এমন এক বার্তা, যা আত্মবিশ্বাসহীন তরুণকেও উদ্বুদ্ধ করে লক্ষ্য স্থির রাখতে এবং জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিতে।গোলের অর্ধশতক
২০০২ সালে স্পোর্টিং লিসবন থেকে যাত্রা শুরু। এরপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, আবার ইউনাইটেড, আর এখন সৌদি আরবে আল নাসর প্রতিটি ক্লাবে তিনি হয়ে উঠেছেন গোলের যন্ত্র। নিচে ক্লাবভিত্তিক সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দেওয়া হলো:
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড – ১৪৫ গোল
রিয়াল মাদ্রিদ – ৪৫০ গোল
জুভেন্টাস – ১০১ গোল
আল নাসর – ৬৫ গোল (এখনও চলছে)
পর্তুগাল জাতীয় দল – ১৩৯ গোল
মোট – ৯০০+
এই পরিসংখ্যান শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি প্রতিদিনের ঘাম, কষ্ট, অনুশীলন আর আত্মনিয়ন্ত্রণের গল্প।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে রোনালদো
বিশিষ্ট ক্রীড়া বিশ্লেষক ও সাবেক ফুটবলার গ্যারি নেভিল বলেন: “রোনালদো এমন একজন, যিনি নিজের মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে খেলার সংজ্ঞা বদলে দিয়েছেন। প্রতিপক্ষ ভয় পায় তাঁর উপস্থিতিতে, কারণ তিনি যে শুধু গোল করেন তা নয় তিনি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।” তরুণ ফুটবলপ্রেমীদের কাছে রোনালদো যেন আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ফুটবল সমর্থক জাহিন আরাফাত বলেন, “আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রোনালদোর কোটেশন পড়ি ‘তুমি যদি কঠোর পরিশ্রম না করো, তাহলে তুমি প্রতিভাকে হারিয়ে ফেলবে।’ এটা আমাকে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়।”
সৌদি লিগে রোনালদোর দ্যুতি
অনেকে মনে করেছিলেন সৌদি আরবের মতো লিগে গেলে রোনালদোর জৌলুস কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আল নাসরের হয়ে তিনি এখনও প্রতি ম্যাচে গোল করছেন, প্রতি মিনিটে ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন। রিয়াদের স্থানীয় ক্রীড়া সাংবাদিক মাকসুদ আল মাহরুকি বলেন, “রোনালদো শুধু খেলেন না, তিনি স্টেডিয়ামে ঢোকার আগেই ম্যাচের মেজাজ তৈরি করে দেন। তাঁর ফিটনেস, ডেডিকেশন, আর স্পোর্টস আইকন হিসেবে অবস্থান এখানকার তরুণদের জীবনের মডেল হয়ে উঠেছে।”
রোনালদো বনাম মেসি
৯০০ গোল পূর্ণ করার মধ্য দিয়ে রোনালদো নিজের জায়গা আলাদা করেই নিয়েছেন। অনেকেই তাঁর সঙ্গে লিওনেল মেসির তুলনা করেন, যিনি বর্তমানে ইন্টার মায়ামিতে খেলছেন এবং তাঁর গোল সংখ্যা ৮২৩। কিন্তু ফুটবলপ্রেমী ও ইউটিউব বিশ্লেষক ফারহান ইমতিয়াজ বলেন, “দুজনই কিংবদন্তি। তবে রোনালদো নিজেকে যেভাবে বারবার প্রমাণ করে চলেছেন, তাতে মনে হয় তিনি এখন কেবল একজন খেলোয়াড় নন, এক আদর্শ। বিশেষ করে যারা নিজেকে প্রতিনিয়ত পুনরুদ্ধার করতে চায়।”
লক্ষ্য কি হাজার গোল?
৯০০ গোলের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে রোনালদোর লক্ষ্য কি ১০০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়া?
এই বিষয়ে আল নাসর কোচ লুইস কাস্ত্রো বলেন: “যদি রোনালদো ফিট থাকেন, তাহলে তাকে ১০০০ গোলের কথা বলা হাস্যকর হবে না। তাঁর মতো খেলোয়াড় মাঠে যতক্ষণ থাকেন, ততক্ষণ কিছুই অসম্ভব নয়।”
রোনালদো মানেই ফিরে আসার সাহস
রোনালদোর ৯০০ গোলের কীর্তি কেবল খেলার বিষয় নয় এটি একটি জীবন দর্শনের দৃষ্টান্ত। যেখানে হার-জিত নয়, প্রতিটি দিনে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা মুখ্য।তাঁর গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় লক্ষ্য যত বড়ই হোক না কেন, প্রতিদিন এক ধাপ করে এগিয়ে গেলেই সাফল্য ধরা দেয়।
সেই বিশ্বাসে, রোনালদো হয়ে উঠেছেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি।