ইসলামের ইতিহাসে নবীজি মুহাম্মদ (সা.) এবং ফেরেশতা জিবরাইলের সাক্ষাৎ এক আলোকময় মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত। এ সাক্ষাতের রহস্যময়তা কেবল আধ্যাত্মিক নয়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও পাঠযোগ্য শিক্ষা দেয়।
প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২:০০:১৫
ইসলামের প্রথম প্রেরিত নবী মুহাম্মদ (সা.) জীবনের নানা পর্যায়ে ফেরেশতা জিবরাইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কোরআনে উল্লেখ আছে যে, জিবরাইল আল্লাহর রূপে সৃষ্ট এবং মানব রূপে দেহ ধারণ করে নবীজির কাছে প্রকাশিত হতেন। এই দ্যুতিময় সাক্ষাৎ কেবল আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদর্শন করেই সীমাবদ্ধ থাকত না; মানব রূপে জিবরাইলের আগমন নবীজিকে বার্তাগুলো গ্রহণ, ব্যাখ্যা ও বাস্তবে প্রয়োগের সুযোগ দিত। বিশেষজ্ঞ ইসলামী গবেষক ড. আসমা বেগম বলেন, "জিবরাইলের মানব রূপে আগমন নবীজিকে ঈশ্বরের বার্তা গ্রহণ ও মানব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করত। এটি দেখায় যে আধ্যাত্মিক দ্যুতি ও মানবিক বোধ একসঙ্গে চলতে পারে।" এ সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে নবীজির মানবিক ও আধ্যাত্মিক চেতনা দুইপথেই পরিপুষ্ট হয়েছে।
জিবরাইলের রূপান্তর বিভিন্ন সময়ের মধ্যে বিভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণ করত। নবীজিকে সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ পৌঁছে দেওয়া, বৈশ্বিক নৈতিকতা শেখানো এবং সমাজে প্রাসঙ্গিক বার্তা প্রচার-সবকিছুই এই সাক্ষাতের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছিল। হাদিসে বর্ণিত, কখনও জিবরাইল কেবল দ্যুতিময় রূপে উপস্থিত হতেন; কখনও মানুষের মতো চেহারায়, যা নবীজিকে মানব জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে ঈশ্বরের বার্তা যুক্ত করতে সাহায্য করত। আন্তর্জাতিক ধর্মতাত্ত্বিক ও comparative religion বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন ধর্মে দেবতা বা ফেরেশতার মানব রূপে আবির্ভাবের ধারণা প্রায় সর্বত্র বিদ্যমান। যেমন, হিন্দু ধর্মে দেবতারা মানব বা প্রাণীর রূপ ধারণ করেন; খ্রিস্টধর্মেও দেবদূতরা মানব রূপে বার্তা পৌঁছে দেন। ইসলামে জিবরাইলের মানব রূপ ও দ্যুতিময় রূপের সমন্বয় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ সাক্ষাত নবীজির জন্য শুধু বার্তা গ্রহণের মাধ্যম ছিল না, বরং মানব জীবনের সঙ্গে ঈশ্বরীয় নির্দেশনার সংযোগ ঘটানোর একটি শিক্ষা। গবেষকরা বলেন, এটি প্রতিটি মুসলিমের জন্য শিক্ষা দেয়-মানবিক জীবনের নৈতিকতা, আধ্যাত্মিক সচেতনতা এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নবীজির এই অভিজ্ঞতা আমাদের জন্যও প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। যেখানে আমরা আমাদের দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত, নৈতিকতার দিকনির্দেশনা এবং সমাজে দায়িত্ব পালন করতে চাই, সেখানে এই সাক্ষাত এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে আসে।
"জিবরাইলের মানব রূপে আগমন নবীজিকে ঈশ্বরের বার্তা গ্রহণ ও মানব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করত।" ড. আসমা বেগম
"আধ্যাত্মিক দ্যুতি ও মানবিক বোধ একসঙ্গে চলতে পারে, এবং নবীজির জীবন সেটির উজ্জ্বল উদাহরণ।" ইসলামী গবেষক হোসনে আরা