“সেলফি তুলতে গিয়ে কবরের আদব ভুলে গেলাম?”: আধুনিক যুগের সামাজিক
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ১০:৫৮:৪৪
বাস্তবতা: কী ঘটেছে?
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে কয়েকজন যুবক একটি কবরস্থানে গিয়ে সেলফি তুলছেন।
ভিডিওটি “কবর সেলফি ট্রেন্ড” হিসেবে অনেক সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই ভাইরাল কবর ভিডিওটি যে মাত্রা পর্যন্ত ছড়িয়েছে, তা নিয়ে ইসলামিক কমিউনিটিতে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা গেছে।
অনেকে এটিকে কবরের প্রতি অবমাননাকর আচরণ হিসেবে দেখছেন।
ইসলামিক আদব: কবরের প্রতি সম্মান
ইসলামে কবর জায়গার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভীতি প্রদর্শনের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
কবর দেখতে যাওয়া মুসলিমের জন্য বিশেষ নিয়ম ও আদব আছে, যেগুলো আল্লাহ ও নবী করীম (সা.) এর হাদিস থেকে স্পষ্ট।
কবরের কাছে হাসাহাসি বা অবজ্ঞাসূচক কাজ কঠোরভাবে বারণ।
কবরের ওপর বসা বা সেলফি তোলা শরীয়াহর আলোকে অনুচিত।
কবরের সৌন্দর্য্য দেখার জন্য যাওয়া উচিত তাবারুক ও দোয়া করার জন্য, না যে কোনও বিনোদনের জন্য।
আল-বুখারী ও মুসলিমসহ বহু হাদিসে বলা হয়েছে, কবর পরিদর্শন মরণোত্তর জীবনের স্মরণ ও আত্মার মাওয়াদা জন্য।
ইসলামপন্থীদের প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠী ও আলেমগণ এই “কবর সেলফি ট্রেন্ড” কে কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তারা বলছেন, এই ধরনের কাজ কবরের প্রতি অবজ্ঞা এবং ইসলামের শিক্ষার প্রতি অসভ্যতা।
কিছু ইমাম মন্তব্য করেছেন, “আমরা যারা মৃত্যুর স্মৃতিচেতনায় জীবন পরিচালনা করি, তাদের উচিত মরদের সম্মান বজায় রাখা।
সেলফি তোলা মানে আমরা সেই সম্মান ভঙ্গ করছি।”
অনেক ইসলামপন্থী সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ট্রেন্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ইমাম ও আলেমদের মতামত
মুফতি ও গবেষকরা বলেছেন, “কবরের পরিবেশ এমন এক স্থান যেখানে দোয়া ও তওবা করাই প্রাধান্য পায়।
সেলফি তোলা ব্যক্তি বা সমাজের আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিক মানসিকতাকে হ্রাস করে।”
ইমাম আহমেদ (ধর্মীয় শিক্ষাবিদ) বলেন, “সেলফি ট্রেন্ডের পেছনে সামাজিক মিডিয়ার আধিপত্য এবং তরুণদের বিনোদন মূলক চিন্তাভাবনা প্রধান কারণ।
তারা বুঝতে পারছে না, যে স্থানটি স্মৃতিচেতনায় ভরা এবং মৃত্যুর প্রকৃত অর্থ বোঝায়, সেখানে এ ধরনের কাজ খুবই অনুচিত।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৈতিকতা বনাম আধ্যাত্মিকতা
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ভাইরাল হওয়ার লোভ অনেক কিছুতেই মানুষকে বঞ্চিত করে প্রকৃত অর্থ থেকে।
কবর সেলফি ট্রেন্ড আমাদের সামনে তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৈতিকতার অভাব এবং আধ্যাত্মিকতার অবমূল্যায়ন।
আমরা কি ভুলে যাচ্ছি যে, সামাজিক মিডিয়াতে মুহূর্তের জন্য প্রাপ্ত লাইক, শেয়ার ও ভাইরাল হওয়া আমাদের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে?
এই ধরনের কীর্তি কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অশিক্ষিততা নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য সতর্কবার্তা।
প্রস্তাবনা ও সচেতনতা
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: ইসলামী আদব সম্পর্কে তরুণদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাদ্রাসা ও সমাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগ জরুরি।
সামাজিক মিডিয়া নীতিমালা: ভাইরাল কন্টেন্টে যেন ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ন না হয়, সে জন্য নিয়মাবলী প্রয়োজন।
পরিবার ও সমাজের ভূমিকা: শিশু ও কিশোরদের মূল্যবোধে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে।
উপসংহার:কবর হলো জীবনের মরণ পরবর্তী এক শান্তিপূর্ণ স্থান, যেখানে মানুষকে শ্রদ্ধা ও ভয় প্রদর্শন করতে হয়।আমাদের উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিকতা ভুলে না যাওয়া।সেলফির নামে কবরের সম্মান হারানো মানে নিজের আধ্যাত্মিকতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা।
আসুন, আমরা সবাই মিলে ইসলামের আদব রক্ষা করি এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করি, যাতে আমাদের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ সমুন্নত থাকে।