আধুনিক সম্পর্ক ও ইসলামের মূলমন্ত্র: তরুণ সমাজের দ্বন্দ্ব ও বাস্তব
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ১০:৫৩:১০
সোশ্যাল মিডিয়ায় এক হুজুরের ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,
“গার্লফ্রেন্ড রাখা ইসলামিক নয়, এটি হারাম।”
ভিডিওটি হাজারো মানুষের নজর কেড়েছে এবং নানারকম বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
অনেকে সমর্থন দিয়েছেন, কেউবা সমালোচনা করেছেন। তরুণ সমাজ এই ভিডিওর প্রভাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
ভিডিওতে হুজুরের বক্তব্য সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করা হলে, বোঝা যায় যে আধুনিক সম্পর্ক নিয়ে ইসলামের অবস্থান এবং তরুণদের আচরণের মধ্যে গভীর অমিল বিদ্যমান।
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রেম ও সম্পর্ক
ইসলাম পুরোটাই শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে।
বিশ্বের সব ধর্মের মতো ইসলামও সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতিমালা দিয়েছে।
অবৈধ সম্পর্ক যেমন গার্লফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডের ধারণা ইসলামে গৃহীত নয়।
কুরআন ও হাদিসে বারবার বলা হয়েছে:
“তোমরা নারীদের কাছে বিবাহ ব্যতীত অন্য কোনো সম্পর্ক রাখো না।”সূরা নূর, আয়াত ৩২
রাসূল (সাঃ) বলেছেন:“যে কেউ বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে, কারণ বিবাহ ঈমানের অর্ধেক।” (বুখারী)
অর্থাৎ ইসলামে সম্পর্কের একমাত্র বৈধ পথ হলো বিবাহ। গার্লফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের মতো সম্পর্ক পরিপূর্ণ হারাম। তবে এই কঠোরতা তরুণ সমাজের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বও তৈরি করে।
আধুনিক তরুণ সমাজের চ্যালেঞ্জ বর্তমান সময়ে ‘গার্লফ্রেন্ড’ ও ‘বয়ফ্রেন্ড’ শব্দগুলো তরুণদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়।
সোশ্যাল মিডিয়া, সিনেমা ও মিউজিক ভিডিওগুলোর মাধ্যমে এই সম্পর্কের মডেল প্রচলিত হয়েছে।
তাই অনেক তরুণ মনে করে প্রেম শুধুমাত্র সম্পর্কের মানে বহন করে না, এটি তাদের স্বাধীনতা ও আধুনিকতার প্রতীক।
কিন্তু এই ধারণা ইসলামের মূল নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। অনেক সময় তরুণরা এই বিষয়ে বিভ্রান্ত হয় এবং ধর্মের কঠোর বিধান মেনে চলা কঠিন মনে করে।
সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা ও ভাইরাল হওয়ার কারণ
ভিডিওটি এত দ্রুত ভাইরাল হওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু কারণ:
সরাসরি ‘হারাম’ শব্দটি ব্যবহার করা অনেকের মনে দাগ কাটে।
তরুণ সমাজের জিজ্ঞাসা ও দ্বিধা:
অনেকেই এই বিষয়ে ধর্মীয় দিক থেকে পরিষ্কার ধারণা পেতে চায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার দ্রুততা ও সংবাদের বিস্তৃতি:
মুহূর্তেই এই ধরনের ভিডিও কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
তবে এই ভাইরাল ভিডিওগুলো কখনও কখনও শুধুমাত্র সমস্যা সৃষ্টি করে, কারণ গভীর তত্ত্ব ও ব্যাখ্যা থাকে না।
মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক প্রভাব
যখন তরুণ সমাজের ব্যক্তিগত মানসিকতা ও ধর্মীয় আদর্শের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তখন এই দ্বন্দ্ব তাদের মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলে।
‘কগনিটিভ ডিসোন্যান্স’ অর্থাৎ চিন্তাভাবনার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়
তারা যেটা চায় (মডার্ন সম্পর্ক), সেটা এবং ধর্মে যা নির্দেশিত (বিবাহই একমাত্র বৈধ সম্পর্ক) তার মধ্যে সংঘাত হয়।
এই বিরোধের ফলে অনেকেই মানসিক চাপ, আত্মসম্মানহীনতা এবং সম্পর্কের বিভ্রান্তিতে পড়েন। সামাজিক বিচ্ছিন্নতাও ঘটতে পারে।
ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি
বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ এ বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন।
তাদের বক্তব্য একাংশে, সমাজের পরিবর্তিত বাস্তবতাকে সম্মান রেখে তরুণদের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে কেন ইসলামে সম্পর্কের জন্য বিবাহ অপরিহার্য।
অন্যদিকে, তারা বলেন কঠোর বিধান থাকলেও ‘মহব্বত’ ও ‘ভালবাসা’ ইসলামে সর্বস্বভাবে গ্রহণযোগ্য, কিন্তু সেটি হবে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ।
বিশ্বসেরা আলেমরা যুব সমাজকে নির্দেশ দেন “সঠিক সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস, নৈতিকতা, ও বিবাহিত দায়িত্ববোধ।”
সমাধান ও করণীয়
তরুণ সমাজকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতে দরকার:
ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকীকরণ এবং সহজ ভাষায় উপস্থাপন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঠিক ধর্মীয় তথ্য প্রচার
পরিবারের ও শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে যুবসমাজকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান
সম্পর্কের গুরুত্ব ও বিবাহের সুবিধা তুলে ধরা
সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব
যত দ্রুত সম্ভব তরুণদের মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে।
যাতে তারা আধুনিকতা ও ধর্মের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে পারে।
একজন সফল তরুণ হবে যে ধর্মের মূল্যবোধ মেনে আধুনিক জীবনে এগিয়ে যেতে পারে।
“গার্লফ্রেন্ড রাখা হারাম? তরুণ সমাজের দ্বন্দ্ব ও ইসলামের নির্দেশনা”
প্রেম ও সম্পর্কের দুনিয়ায় তরুণদের অনেক প্রশ্ন থাকে। কিন্তু ধর্মের নির্দেশনা যেমন কঠোর মনে হতে পারে, সেটার মূল লক্ষ্য তাদের সুস্থ ও সফল জীবন নিশ্চিত করা।
আজকের তরুণরা যেন শুধু ট্রেন্ড ফলো করে না, বরং ইসলামিক মূল্যবোধের আলোকে নিজেদের জীবন সাজায়।তাই, ভালোবাসা আর সম্পর্কের সত্যিকারের অর্থ বোঝা জরুরি, যা শুধুমাত্র পবিত্র বিবাহের মধ্যেই পূর্ণতা পায়।