আচ্ছা এই রাষ্ট্র আর সরকারের তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো কী করে? এগুলো কি হত্যাকাণ্ড নয়?
 
                            প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ৮:০৬:৫১
এই ছবিটা যে কোন মানুষকে কাঁদাবে! মেট্রো রেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে আবুল কালাম নামের যে পথচারী মারা গেছেন এই শিশু তাঁর সন্তান। আচ্ছা এই শিশু বা আবুল কালামের অপরাধ কী? রাষ্ট্রের ব্যর্থতার দায়ে কেন দুই শিশুকে বাবা হারাতে হবে? আজকে তো কালামের জায়গায় যে কেউ প্রাণ হারাতে পারতেন! আচ্ছা এমন ঘটনার ব্যর্থতায় কেন কারো শাস্তি হবে না? কেন দায়িত্বশীল কেউ পদত্যাগ করবে না?
আচ্ছা এই খামারবাড়িতে আগেও বিয়ারিং প্যাড খুলেছে কিন্তু মানুষ মরেনি বলে হুঁশ হয়নি। আচ্ছা মেট্রোরেল আইনে তো নিয়মিত তদারকি ও নিরাপত্তা প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। কোথায় সেগুলো? এর দায় কার? পাঁচ লাখ টাকা দিয়েই আপনাদের দায়িত্ব শেষ!
দেখেন এই ধরনের ঘটনা ঢাকাতে এটাই প্রথম নয়। এই তো মগবাজারে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে একটি স্টিলের পাত মাথায় পড়লে মতিউর রহমান নামের একজন বছর দুই আগে মারা যান।
সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ইট পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা মারা যান তার আগে। মহাখালীতে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ে থেকে রড পড়ে এক কিশোর নিহত হয়। এর আগে উত্তরায় ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
আচ্ছা একটা শহরে বারবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটবে? আচ্ছা এই রাষ্ট্র আর সরকারের তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো কী করে? এগুলো কি হত্যাকাণ্ড নয়?
এই তো কয়েকদিন আগে মিরপুরে ১৬ জুন মানুষ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেল, এতোটাই অঙ্গার যে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব নয়! এর আগে মাইলস্টোনে বাচ্চারা মরলো। বেইলি রোডে খেতে গিয়ে পুড়ে মরল ৪৬ জন মানুষ ।
এই যে সাধারণ মানুষের এতো মৃত্যু এগুলোর দায় কার? অনেকবার লিখেছি, এই দেশে ভবনে কোন দুর্ঘটনা বা আগুন লাগার পর জানা যায় অনুমোদন নেই। বাস বা লঞ্চের যে কোন দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর পর জানা যায় ফিটনেস নেই। সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে সন্তানের মৃত্যুর পর জানা যায় হাসপাতালের অনুমোদন নেই। তার আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারো ঘুম ভাঙে না। এ কারণেই আমি বলি এগুলো কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড!
মেট্রো রেল বলেন, রাজউক বলেন, বিআরটিএ বলেন, ওয়াসা বলেন, তিতাস বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেন কতো যে সরকারি সংস্থা আর মন্ত্রনালয় এদেশে আছে! কিন্তু প্রত্যেকটা সরকারি সেবা সংস্থার সবাই যেন ঘুমায়! সেখানে গড়ে ওঠে দুর্নীতির পাহাড়।
৫৪ ধরে একই অবস্থা! কোথাও কোন পরিবর্তন নেই! এসব কারণেই আমি এগুলোকে আর এখন দুর্ঘটনা বলি না। এগুলো কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড!
আপনি কাজে গিয়ে আগুনে পুড়েবেন, খেতে গিয়ে মরবেন, হাসপাতালে সুন্নতের খতনা করতে গিয়ে মরবে আপনার সন্তান, এন্ডোসকপি করতে গিয়ে মরবে আপনার ভাই, নির্মাণাধীন ভবনের রড পড়ে মারা যাবে কোন বাবা, বাস দুর্ঘটনা, ট্রেনে আগুন কিংবা ভবনের আগুনে মারা যাবে সাধারণ মানুষ, গার্মেন্টস বা কারখানায় মরবে শ্রমিক আর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা স্কুলে পুড়ে মরতে হবে নিস্পাপ শিশুদের!
আফসোস প্রতিবারই মৃত্যুর ঘটনার পর রাষ্ট্র নামকাওয়াস্তে ক্ষতিপূরণ দেয়, তদন্ত কমিটি হয়, নানা আলোচনা হয়, তারপর আমরা ফের অপেক্ষা করি নতুন কোন দুর্ঘটনার! আচ্ছা স্বাধীনতার তো ৫৪ বছর হলো! এভাবে আর কতদিন চলবে? আর কতো মানুষ মরলে আমাদের হুশ হবে? আর কতো মানুষ মরলে এই রাষ্ট্রের ঘুম ভাঙবে? আর কবে আমরা বুঝবো উন্নয়ন মানে শুধু বড় বড় ভবন নয় জবাবদিহিতা ও সুশাসন জরুরি।
দেখেন, আমার এই প্রতিটা কথা পুরোনো। গত ২০ বছরে অসংখ্যবার এই কথাগুলো লিখেছি। কিন্তু এই রাষ্ট্রের হুঁশ হয়নি। জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি হয়নি।
আপনারা যারা দেশ চালান,আপনারা যারা নানা পদে বসে আছেন, আপনারা যারা ক্ষমতাবান, আপনারা যারা নীতি নির্ধারক, আপনাদের আর কতো জীবন লাগবে ? আর কতো আহাজারি দেখলে আপনাদের হুঁশ হবে?
শরিফুল হাসানের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া।