নির্যাতন প্রতিরোধে জাতিসংঘের ‘ঐচ্ছিক প্রটোকল’ (OP-CAT) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যা মানবাধিকার রক্ষায় এক যুগান্তকারী অগ্রগতি।
প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২৫, ৩:৪২:৫৪
বাংলাদেশ ওপি-সিএটি প্রটোকলে যুক্ত হচ্ছে: নির্যাতন প্রতিরোধে বড় পদক্ষেপ, সমন্বিত উন্নয়ন নিয়েও অগ্রগতি
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের (CAT) পরিপূরক প্রটোকল ওপি-সিএটি-তে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ৩৩তম বৈঠকে এই প্রস্তাব পাস হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই প্রটোকল আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণ করা হয় ২০০২ সালে। এর উদ্দেশ্য হলো, বন্দিশালাসহ অন্যান্য হেফাজত কেন্দ্রে সম্ভাব্য নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ প্রতিরোধে কার্যকর পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালেই মূল নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষর করে। তবে এতদিন পরিপূরক এই প্রটোকলটিতে যুক্ত হয়নি।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত?
ওপি-সিএটি তে পক্ষভুক্ত হলে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা (National Preventive Mechanism – NPM) গঠন করতে হবে, যারা নিয়মিতভাবে হেফাজত কেন্দ্র, কারাগার, থানা, র্যাব ক্যাম্প, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র ইত্যাদিতে পরিদর্শনে যাবে। এই পদক্ষেপ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কাছাকাছি আনতে সাহায্য করবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও আইনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এই প্রটোকলে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে বারবার চাপের মুখে ফেলেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত কূটনৈতিকভাবেও ইতিবাচক বার্তা দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, উন্নয়নের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদন
একই বৈঠকে আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে। এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলাকে একটি পরিকল্পিত শিল্প ও অর্থনৈতিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি হবে। এখানে থাকবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন, পুনর্বাসন, পরিবেশ রক্ষা ও বিনিয়োগের সমন্বিত রূপরেখা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্রবন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং পর্যটনকে কেন্দ্র করে মহেশখালীর সম্ভাবনা অনেক। তবে সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয় জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একদিকে মানবাধিকার সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার দিকে পদক্ষেপ, অন্যদিকে টেকসই উন্নয়ন এটি বোঝায় যে সরকার শুধু রাজনীতি নয়, নীতিগত সংস্কারে মনোযোগী। নির্যাতন প্রতিরোধে ওপি-সিএটি প্রটোকলে যুক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, যা দেশের বিচার ব্যবস্থা ও মানবাধিকার বাস্তবায়নে নতুন আশার দিগন্ত উন্মোচন করবে।