আধুনিক রাডার ও মহড়ার অগ্রগতি, সীমাবদ্ধতায় বাজেট ও সমন্বয়
প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০২৫, ১২:৩৫:২০
বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে আধুনিকীকরণের পথে এগোলেও এখনো তা পুরোপুরি প্রস্তুত নয় বলে মত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন রাডার স্থাপন ও মহড়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ যেমন ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে ধরা হচ্ছে, তেমনি বাজেট সীমাবদ্ধতা, স্বল্পপরিসরে অস্ত্রভাণ্ডার ও সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি সমালোচনার মুখে ফেলেছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে।
রাডার সংযোজন ও পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি
২০২৫ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ৭১ নম্বর স্কোয়াড্রনে এবং জুনে বগুড়ায় ফ্রান্সের তৈরি GM-403M রাডার স্থাপন করা হয়েছে। এই রাডারগুলো দীর্ঘ পরিসরে শত্রু বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তে সক্ষম এবং এগুলো সংযুক্ত হয়েছে বিমানবাহিনীর চলমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কে। এছাড়াও রাডার ব্যবস্থাপনায় ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সক্ষমতা বাড়াতে আরও কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে।
নিয়মিত মহড়া ও প্রতিরক্ষায় প্রস্তুতি
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী নিয়মিতভাবে "ADEX" মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, যশোর ও টাঙ্গাইল অঞ্চলে অনুষ্ঠিত এসব মহড়ায় অংশ নেয় মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, কে-৮ ট্রেইনার জেট, রকেট লঞ্চার ইউনিট, ম্যানপোর্টেবল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (MANPADS) এবং উন্নত রাডার টিম। মহড়ায় আকাশসীমায় শত্রু অনুপ্রবেশ সনাক্ত ও প্রতিরোধের কৌশল অনুশীলন করা হয়।
সামরিক বিশ্লেষকদের মন্তব্য
আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা এখনো "নিম্ন স্তরে" অবস্থান করছে। চীন থেকে সম্ভাব্য J-10C যুদ্ধবিমান সংগ্রহ, HQ-17AE ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এবং UAV বা ড্রোন প্রযুক্তি সংযুক্তির মাধ্যমে সামর্থ্য বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে পূর্ণাঙ্গ ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (IADS) এখনো চালু হয়নি, যা আকাশ থেকে ভূপাতিত হুমকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ।
বাজেট ও নীতিগত সীমাবদ্ধতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরক্ষা বাজেটে বিমান প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে কম, ফলে দ্রুত আধুনিকীকরণ ব্যাহত হচ্ছে। একইসাথে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়াকে ধীর করে তোলে।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি
ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশসমূহ যেখানে ড্রোন প্রযুক্তি, রাডার ব্যবস্থাপনা ও অ্যাডভান্সড জেট সংগ্রহে এগিয়ে, সেখানে বাংলাদেশ সামান্য পিছিয়ে রয়েছে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত Full Spectrum Air Defence Summit-এ বাংলাদেশের সামরিক প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ আভাস দেয় যে, ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশটি আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে চায়।
বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। তবে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পূর্ণতা পেতে হলে প্রয়োজন যথাযথ বাজেট, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং সমন্বিত কৌশল বাস্তবায়ন। আকাশ সীমা সুরক্ষায় শুধু যন্ত্র নয়, চাই দক্ষ মানবসম্পদ, কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
সংক্ষেপে মূল পয়েন্ট: