 
                            প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৫:৪৭:৫৩
বিরল জেনেটিক রোগ সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হাজারো রোগীর জন্য এক নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্টেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যয়বহুল ওষুধ ‘ট্রিকাফটা’র বিকল্প হিসেবে তৈরি করেছে ‘ট্রিকো’ নামের জেনেরিক ওষুধ, যা মূল ওষুধের চেয়ে দামে প্রায় ৫৮ গুণ সাশ্রয়ী। এই অগ্রগতি বাংলাদেশে নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও ওষুধের ন্যায়সঙ্গত প্রাপ্যতা ও মানবিক চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত। যার মাত্র ৬০ শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয় হয় ও মাত্র ২৭ শতাংশ চিকিৎসা পান। শ্বাসযন্ত্র ও হজমতন্ত্রে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টিকারী এই জেনেটিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গড় আয়ু অনেক কম।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ভার্টেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস উদ্ভাবিত ট্রিকাফটা ওষুধটি রোগীদের জীবনমান ও আয়ু বাড়াতে সক্ষম। ওষুধটিতে ইলেক্সাকাফটার, টেজাকাফটার ও আইভাকাফটার এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়, যা রোগীর আয়ু ও জীবনমান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। তবে এর জন্য বছরপ্রতি খরচ ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার, যা অধিকাংশ রোগীর নাগালের বাইরে।
এই প্রেক্ষাপটে, সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত শিশুদের মায়েরা বেক্সিমকো ফার্মার উৎপাদিত ট্রিকাফটা’র জেনেরিক কপি ‘ট্রিকো’ রোগীদের হাতে পৌঁছে দিতে ‘কমিউনিটি পরিচালিত বায়ারস ক্লাব’ চালু করেছেন। তারা ২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অনুষ্ঠিত নর্থ আমেরিকান সিস্টিক ফাইব্রোসিস কনফারেন্সে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
ঘোষণায় জানানো হয়, বেক্সিমকো ফার্মার তৈরি ট্রিকো’র মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় হবে বছরে শিশুপ্রতি মাত্র ৬ হাজার ৩৭৫ ডলার, যেখানে মার্কিন কোম্পানিটির তৈরি ট্রিকাফটা’র খরচ বছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অর্থাৎ, ট্রিকাফটা’র দামে একটি শিশুর চিকিৎসার সমান খরচে ট্রিকো দিয়ে ৫৮টি শিশুর চিকিৎসা সম্ভব হবে। ওষুধটি ২০২৬ সালের এপ্রিল নাগাদ সরবরাহ করা যাবে বলে জানানো হয়।
সম্মেলনে ‘রাইট টু ব্রিদ’ গ্লোবাল ক্যাম্পেইনের নেত্রী, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘জাস্ট ট্রিটমেন্ট’র মুখ্য সমন্বয়ক এবং সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত এক শিশুর মা গেইল প্লেজার বলেন, ‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন, যার জন্য সারা বিশ্বের সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগী ও তাদের পরিবার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। আমরা দেখেছি, অনেক শিশু চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারিয়েছে, অথচ চিকিৎসার ব্যয় পুরোপুরি নাগালের বাইরে। আজ সেই দুঃসহ অবস্থার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে, ভুক্তভোগী রোগী ও সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সবার উদ্যোগের ফলে বিলিয়ন ডলার করপোরেশনের সব অসহযোগিতা এবং বাধা অতিক্রম করে এরকম একটি দুরূহ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।’
বেক্সিমকো ফার্মার ট্রিকো’র মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বছরে ১২ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার ও শিশুদের জন্য ৬ হাজার ৩৭৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ট্রিকাফটা’র দামের তুলনায় বহুগুণ কম।
একই সঙ্গে কোম্পানিটি বেক্সডেকো নামে আরেকটি ওষুধ বাজারে আনছে, যা ট্রিকোর একটি উপাদান আইভাকাফটার’র জেনেরিক সংস্করণ। এর দাম হবে প্রতি ট্যাবলেট মাত্র ৫ ডলার।
বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) রাব্বুর রেজা বলেন, ‘বেক্সিমকো ফার্মা সবসময় নিত্য-নতুন ওষুধসহ ব্যয়বহুল চিকিৎসার রোগীদের জন্য সুলভ মূল্যে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের লক্ষ্য শুধু ওষুধ তৈরি নয়, বরং মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো বিরল রোগের চিকিৎসা খুবই সীমিত এবং তা এতটাই ব্যয়বহুল যা বেশিরভাগ রোগীর সামর্থ্যের বাইরে। আমাদের তৈরি সাশ্রয়ী মূল্যের ট্রিকো সেই ব্যবধান ঘোচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
কর্তৃপক্ষ বলছে, মালয়েশিয়াভিত্তিক গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ক (টিডাব্লিউএন), যুক্তরাজ্যের রোগীদের সংগঠন ‘জাস্ট ট্রিটমেন্ট’ এবং বিশ্বব্যাপী ‘রাইট টু ব্রিদ’ ক্যাম্পেইনের অনুরোধে অসহায় সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগীদের সাহায্যার্থে, একান্ত মানবিক বিবেচনায় বেক্সিমকো ফার্মা এই ওষুধ তৈরির উদ্যোগ নেয়।