বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় নিহতদের পরিচয় জানাতে সময় নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ, প্রশ্ন জনতার -স্বচ্ছতা কোথায়?
প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩:৩৬
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুইজন শিক্ষক ছাড়া বাকি সবাই শিশু শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।
তবে দুর্ঘটনার প্রকৃত নিহতের সংখ্যা ও হতাহতের তালিকা প্রকাশে দেরি হওয়ায় ‘লাশ গোপনের’ গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন নাগরিকরা।
দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব অবরুদ্ধ
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুর্ঘটনাস্থলে বিক্ষোভে নামে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবি জানিয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
প্রথমে পূর্ণাঙ্গ হতাহতের তালিকা প্রকাশ, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং জনবহুল এলাকা থেকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সরানোর দাবি জানালেও পরে তারা উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবিও তোলে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তরা ও আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। বিকেল থেকে কলেজ ভবনের আশপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পুলিশি সহায়তায় অবরুদ্ধ উপদেষ্টারা সেখান থেকে বের হন।
সচিবালয় ঘিরে রণক্ষেত্র
একই দাবিতে বিকেলে সচিবালয় ঘিরে বিক্ষোভে নামে শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল। তারা সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং কিছু সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে অন্তত ৭৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সচিবালয় এলাকা পরিণত হয় এক রণক্ষেত্রে।
নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
সোমবার প্রথমে নিহতের সংখ্যা জানানো হয় ১৯ জন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ১২ জনের। মঙ্গলবার রাত নাগাদ মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১ জনে। তবে আইএসপিআর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য-এ পার্থক্য থাকায় বিভ্রান্তি ছড়ায়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান জানান, “দেহাবশেষ ও মৃতদেহের মধ্যে পার্থক্য থাকায় পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে ‘লাশ গোপন’ নিয়ে ছড়ানো তথ্যকে “অপপ্রচার” বলে দাবি করেছে। বলা হয়েছে, “আসলে মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় দেরি হচ্ছে। সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।”
আহতদের চিকিৎসায় বিদেশি চিকিৎসক দল
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ জন আহত ব্যক্তি ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বিদেশি সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল ও ভারত থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের একটি দল ঢাকায় এসেছে।
সরকারি ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও সরকারের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে তীব্র প্রশ্ন। যথাযথ তথ্য প্রকাশে বিলম্ব, এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করতে দেরি, ত্রাণ তহবিলে সহায়তার আহ্বান পোস্ট সরানো, এবং ক্রাউড কন্ট্রোল করতে ব্যর্থতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আল মামুন এক পোস্টে লেখেন, “আগে ছিল ...লের সরকার! এখন হইছে আবালের সরকার!”
কবি টোকন ঠাকুর লেখেন, “একটা গণভোট হলে বোঝা যেত এই ইউনূস সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য উপযুক্ত কিনা।”
বিমানবাহিনী প্রধানের মন্তব্য
বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান নিহত পাইলটকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে লুকানোর কিছু নেই। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। অপপ্রচারে কান দেবেন না।