আমেরিকার রাস্তায় ঢাকার রিকশা ‘আমেরিকান রিকশা’ নিয়ে হইচই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নকশা ও রঙে মিল, ভাবনায় ভিন্নতা।
প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:০১:৪৪
একটা সময় ছিল যখন রিকশা মানেই শুধু ঢাকা বা কলকাতার গলি। কিন্তু এখন? নিউইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তায়, টাইমস স্কয়ারের মোড়ে বা ব্রুকলিন ব্রিজের নিচে হঠাৎ দেখা মিলছে ‘আমেরিকান রিকশা’র! তবে সেটি শুধু বাহন নয়, বরং হয়ে উঠেছে সংস্কৃতির বাহক, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সম্প্রতি নিউইয়র্কের রাস্তায় চলাচলরত কিছু রিকশার ছবি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে। এর চাকা, কাঠামো, এমনকি পেছনের চিত্রকর্ম পর্যন্ত ঢাকার রিকশার মতো রঙিন, অলঙ্কৃত, এবং একেবারে নজরকাড়া।
কে বানাল ‘আমেরিকান রিকশা’?
এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ, যারা নিউইয়র্কে একটি পরিবেশবান্ধব ট্যুরিজম স্টার্টআপ চালু করেছেন। তাদেরই ধারণা ছিল যাত্রীদের পরিবহণের পাশাপাশি ঢাকার রিকশাকে তুলে ধরা বৈশ্বিক সংস্কৃতির এক টুকরো হিসেবে। তানভীর আহমেদ, উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “ঢাকার রিকশা শুধু পরিবহনের মাধ্যম নয়, এটি একধরনের লোকশিল্প। আমরা চাইছিলাম এই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এমনকি আমেরিকানদের কাছেও।” এই রিকশাগুলোর কাঠামো আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। রয়েছে ইলেকট্রিক সাপোর্ট, জিপিএস, এমনকি অ্যাপের মাধ্যমে ভাড়া নির্ধারণের সুবিধাও।
“রিকশা শুধু বাহন নয়, এটি শিল্প। নিউইয়র্কে তা এখন হয়ে উঠছে চলমান আর্ট গ্যালারি।” তানভীর আহমেদ
নেটদুনিয়ায় ঝড়
ইনস্টাগ্রামে একজন বিদেশি পর্যটক লিখেছেন, “Never thought I’d ride a Bangladeshi-style rickshaw in New York so beautiful and nostalgic!” বাংলাদেশি নেটিজেনরাও মুগ্ধ। কেউ কেউ বলছেন, ঢাকার রিকশা যদি বিশ্ব ব্র্যান্ড হতে পারে, তবে এর শিল্পীদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
রিকশা শিল্পের আন্তর্জাতিকতা
বিশ্বের অন্যান্য দেশেও রিকশার রূপ দেখা গেছে আগে জাপানে পুল রিকশা, ভারতে টুকটুক, থাইল্যান্ডে টুক-টুক। তবে ঢাকার রিকশার মতো শিল্পমণ্ডিত বাহন খুব কমই আছে। বিশ্বখ্যাত ডিজাইনার হার্মেস পর্যন্ত ঢাকার রিকশার মোটিফ ব্যবহার করেছে তাদের ব্যাগের ডিজাইনে। টোকিওর ডিজাইন মিউজিয়ামেও রয়েছে ঢাকার একটি রিকশা, যা ‘লোক আর্ট’ ক্যাটাগরিতে প্রদর্শিত।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
‘আমেরিকান রিকশা’ শুধু পাইলট প্রজেক্ট নয়। উদ্যোক্তারা বলছেন, ভবিষ্যতে এই রিকশা নিয়ে নিউইয়র্কে গাইডেড ট্যুর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি রিকশার পেছনে থাকবে বাংলাদেশের গল্প মহাকাব্য, সিনেমা, গ্রামীণ জীবনের চিত্র। তানভীর বলেন, “এই রিকশার মধ্য দিয়ে আমরা যেমন সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছি, তেমনি নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন গড়ছি।”