বাংলাদেশের আইন ও বিচারব্যবস্থায় ন্যায়বিচারের চ্যালেঞ্জ
প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ২:০৯:৫৩
বাংলাদেশের আইন ও বিচারব্যবস্থায় ন্যায়বিচারের চ্যালেঞ্জ
ধর্ষণ কেবল শারীরিক আঘাত নয়, এটি ভুক্তভোগীর মনের গভীরে এমন এক রক্তক্ষরণ, যা জীবনব্যাপী সঙ্গী হয়। দেশের সমাজ ও আইনি ব্যবস্থায় ধর্ষণ মামলার বিচার কতটুকু ন্যায়সঙ্গত হচ্ছে, সেটাই আজকের বিশ্লেষণের বিষয়।
মামলার পটভূমি ও সংশ্লিষ্ট আইন: ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বাংলাদেশের ফৌজদারি বিধিমালার ধারা ৩৭০ এবং ৩৭১ অন্তর্ভুক্ত। শিশু ধর্ষণের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের “শিশু অধিকার সুরক্ষা আইন” এর মাধ্যমে শাস্তি আরও কঠোর করা হয়েছে। একই সঙ্গে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় যৌন নিপীড়ন ও ভিডিও ফুটেজের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এই আইনের আওতায় ধর্ষণ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, প্রমাণ সংগ্রহে দুর্বলতা ও সমাজের মানসিকতার কারণে ন্যায়বিচারে অনেক সময় জটিলতা দেখা যায়।
আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণ: ধর্ষণ মামলাগুলোতে আদালত সাধারণত শক্ত অবস্থান নেয়। বিচারকরা প্রমাণের ভিত্তিতে দ্রুত ও কঠোর রায় দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, প্রমাণ সংগ্রহের দুর্বলতা, ভুক্তভোগীর মানসিক চাপ, এবং সামাজিক অপরাধের ভয় অনেক সময় বিচার প্রক্রিয়ায় বাঁধা সৃষ্টি করে।একজন
বিচারক সম্প্রতি বলেন, “ধর্ষণ মামলায় সামাজিক চাপ ও ষড়যন্ত্র অনেক সময় সত্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং, বিচার ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও দ্রুতগামী করতে হবে।”
সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের মতামত:আইনজীবী মুনা রহমান বলেন, “ধর্ষণ মামলা পরিচালনা জটিল, কারণ প্রমাণ পেশ করার পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হয়।”তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম যোগ করেন, “সত্য বের করতে তদন্তের প্রতিটি ধাপ পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়া প্রয়োজন, তবেই ন্যায়বিচার সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নয়নেও আমাদের কাজ সহজ হয়েছে।”
বাস্তব কেস স্টাডি:২০১৯ সালে সিলেটে এক ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি ও দ্রুত বিচারের নজির স্থাপন হয়। মামলা দীর্ঘদিন মামলা না টেনে দ্রুত তদন্ত ও শক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেয় আদালত। তবে, কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ায় ও প্রমাণের অভাবে ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়।
সামাজিক প্রভাব ও মনোবিজ্ঞানী মতামত:ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিরা সামাজিক কলঙ্কের কারণে প্রায়ই নীরব থাকেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মসম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মনোবিজ্ঞানী ডা. সাবা আক্তার বলেন, “ভুক্তভোগীকে মানসিক পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা দিতে না পারলে সমাজে ধর্ষণের ভয়াবহ প্রভাব কমানো কঠিন।”
সুতরাং, ধর্ষণ প্রতিরোধে শুধু আইনি ব্যবস্থা নয়, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও মানসিক সুরক্ষা অপরিহার্য।
ধর্ষণ মামলায় ন্যায়বিচার পাওয়া মানে কেবল এক ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি বার্তা। এটি আইনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস গড়ে তোলে এবং অপরাধ দমন নিশ্চিত করে। কিন্তু বাস্তবে দীর্ঘসূত্রিতা, প্রমাণের অভাব ও সামাজিক ভীতি ন্যায়বিচারের পথে অন্তরায়। অতএব, প্রমাণ সংগ্রহে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, ভুক্তভোগীর মানসিক ও সামাজিক সুরক্ষা, ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করাই হবে কার্যকর সমাধান। একটি নিরাপদ সমাজ গড়তে আমাদের সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সচেতন ও সহমর্মী হতে হবে।