পলাতক আসামি, সাক্ষীর অনুপস্থিতি ও প্রমাণের ঘাটতি ন্যায়বিচারের পথে
প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ২:০৫:২৮
পলাতক আসামি, সাক্ষীর অনুপস্থিতি ও প্রমাণের ঘাটতি ন্যায়বিচারের পথে বাধা কোথায়?
ঘটনার পটভূমি: অপরাধের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া ন্যায়
রাজধানীর মিরপুরে ২০১৮ সালে এক ব্যবসায়ীকে তার অফিসে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পুলিশের তদন্তে ওঠে আসে ব্যবসায়ী তারই এক পরিচিতজনের হাতে খুন হন। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও আজও মামলার মূল আসামি ধরা পড়েনি।
প্রতিবার শুনানির তারিখে আদালতে বলা হয় “আসামি এখনো পলাতক, গ্রেফতারে কোনো অগ্রগতি নেই।”
প্রশ্ন ওঠে আইন কি সত্যিই সব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে পারে?
সংশ্লিষ্ট আইন ও ধারাএই ধরণের হত্যার মামলা পড়ে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০২ ধারা ও ৪৫ ধারার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত আইনের অধীনে।
অনুপস্থিত আসামির ক্ষেত্রে:
- দণ্ডবিধি ৩৫৩ ধারা অনুসারে, পলাতক আসামির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা যেতে পারে।
- দণ্ডবিধি ৩৬৪ ধারা অনুসারে, সাক্ষী বা ভিকটিমের পরিবারকে ভয় দেখানো অপরাধ।
আদালতের পর্যবেক্ষণ: ‘আইনের হাত লম্বা, কিন্তু ধরা পড়ে কখন?’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের একজন বিচারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন:“আইন কাঠামো যথেষ্ট শক্তিশালী, কিন্তু প্রমাণ সংগ্রহ ও আসামি গ্রেফতারে ঘাটতি থাকলে বিচারও থমকে যায়।”
তিনি আরও বলেন:“মিডিয়ার আলোচনায় থাকা মামলাগুলো দ্রুত অগ্রসর হলেও, সাধারণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। এতে ন্যায়বিচারে প্রশ্ন ওঠে।”
আইনজীবী ও তদন্ত কর্মকর্তার মন্তব্য
অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন বলেন:“সব খুনের বিচার সম্ভব, যদি রাষ্ট্র তার প্রক্রিয়াকে প্রমাণ ও সাক্ষ্যনির্ভর করে তোলে। কিন্তু দুর্বল তদন্ত ও হুমকির মুখে থাকা সাক্ষীরা বড় প্রতিবন্ধকতা।”
এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন:“অন্যায় হলেও প্রত্যক্ষদর্শী না থাকলে, আসামি যত শক্তিশালী হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে মামলা টিকিয়ে রাখা কঠিন।”
বাস্তব কেস স্টাডি: বিচারহীনতায় হারিয়ে যাওয়া ৩টি আলোচিত খুন
টাঙ্গাইলের কলেজছাত্রী রাশিদা হত্যা মামলা (২০১7): প্রমাণের অভাবে আসামিরা খালাস পায়।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হত্যা (২০১9): সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে মামলাটি বর্তমানে স্থগিত।
সাতক্ষীরায় বৃদ্ধ দম্পতির খুন: তদন্তে ধীরগতি, অভিযুক্ত এখনো পলাতক।
মনোবিজ্ঞানী বিশ্লেষণ: ‘বিচারহীনতা তৈরি করে সামাজিক অস্থিরতা’
ড. শায়লা রহমান, সমাজমনোবিজ্ঞানী বলেন:
“যখন মানুষ দেখে খুন হয়েও বিচার হয় না, তখন সামাজিকভাবে একধরনের ‘ভয়হীনতা’ তৈরি হয় যা ভবিষ্যতে আরও অপরাধ জন্ম দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “ন্যায়বিচারের অভাব মানুষকে আইনের বাইরে প্রতিশোধে উৎসাহিত করে।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বার্তা
- ভিকটিম পরিবারের হতাশা: “আমরা এখন শুধু অপেক্ষা করি বিচার কি আদৌ হবে?”
- সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ: “আইন শুধু কাগজে, বাস্তবে দুর্বল।”
- মানবাধিকার সংগঠনের দাবি: “স্বচ্ছ তদন্ত ও নিরাপদ সাক্ষ্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।”
আইন শক্তিশালী, কিন্তু প্রয়োগ কতটা সঠিক?
আইনের হাতে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্ভব এটি শুধু কাগজে নয়, বাস্তবেও সম্ভব হওয়া উচিত।
কিন্তু তদন্ত, সাক্ষ্য, আসামির গ্রেফতার, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এসব না থাকলে আইন হয়ে পড়ে শুধু একটা নীরব বই।
আসলে, ন্যায়বিচার কেবল আদালতের রায়ে নয়, এটি নির্ভর করে রাষ্ট্রের সদিচ্ছা, সমাজের সচেতনতা ও প্রত্যেক নাগরিকের সাহসের উপর।