 
                            প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫১:৫৭
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের’ মতো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলার আবেদন করা হয়েছে।
লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি আওয়ামী লীগের পক্ষে এই অভিযোগ আদালতে উপস্থাপন করেছেন বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে চেম্বারটি।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সময়কালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক হামলা’ চালানো হয়েছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে রোম সংবিধির ১৫ নম্বর বিধি অনুযায়ী আইসিসির প্রসিকিউটরকে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০১০ সালের ২৩ মার্চ রোম সংবিধি অনুসমর্থন করে এবং একই বছরের ১ জুন থেকে সংবিধিটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়।
এমন এক সময়ে অভিযোগ দাখিল করা হলো যখন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষা চলছে। ২০২৪ সালের জুলাই–অগাস্টে আন্দোলন দমনে উসকানি, প্ররোচনা, নির্দেশনা, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন।
স্টিভেন পাওলস জমা দেওয়া আবেদনে দাবি করেন, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ‘প্রায় ৪০০’ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অনেককে ‘মব তৈরি করে পিটিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। ঘটনাগুলোর ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যসহ নানা প্রমাণও নথিতে যুক্ত করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, এসব হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের মতো কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্তর্ভুক্ত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত বা বিচার হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা নেই।
এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট অসংখ্য মানুষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখার অভিযোগও যোগ করা হয়েছে। রাজনীতিবিদ, বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিক, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর অন্তত ২৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মৃত্যু কারাগারে ঘটেছে বলেও আবেদনে দাবি করা হয়। ‘হৃদরোগজনিত’ মৃত্যুর কথা বলা হলেও, অনেক মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায় বলেও দাবি করা হয়।
স্টিভেন পাওলস আরও দাবি করেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ডেভিল হান্ট’ নামে একটি অভিযানের ঘোষণা দেয়, যার লক্ষ্য ছিল কথিত ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ’ দমন করা। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ এ অভিযানে মাত্র ১২ দিনে প্রায় ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর সরকার ‘ইমিউনিটি অর্ডার’ জারি করে জানায় যে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। অভিযোগে বলা হয়, এমন উদ্যোগ অপরাধীদের দায়মুক্তির সুযোগ তৈরি করে এবং রাষ্ট্রের নীরব সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
আবেদনে শেষ পর্যন্ত বলা হয়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে এবং এমন অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে। তাই দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও বিচারের জন্য তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।