ডিজিটাল ডিভাইসে সন্দেহজনক নথি ও বার্তার ইঙ্গিত, জব্দ করে ফরেনসিক পরীক্ষার আদেশ
প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০২৫, ৩:১২:২৪
রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আলোচিত মডেল মেঘনা আলমের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কি না, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার সকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন বেলা ১১টার দিকে নিজের পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ফেরত পেতে আদালতে উপস্থিত হন মেঘনা আলম। এরপর সংক্ষিপ্ত শুনানিতে মেঘনা আলমের পক্ষে আইনজীবী মহিমা বাঁধন ও মহসিন রেজা আসামির জিনিসপত্র ফেরতের আবেদন জানান।
শুনানিতে আইনজীবীরা জানান, মেঘনা আলম একজন লিডারশিপ ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেন এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে নিয়মিত বিদেশ যাত্রা করতে হয়। এ জন্য তাঁর ব্যবহৃত আইফোন-১৬ প্রো, ম্যাকবুক, অপো মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এসব ফেরতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হবে বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. হারুন অর রশিদ এ আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, আসামি বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মামলাটি চাঞ্চল্যকর। আসামির ফোন ও ল্যাপটপ থেকে জানা দরকার কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে কাকে টার্গেট করেছেন। এসব বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, তাই আসামির জিনিসপত্র ফেরতের বিরোধিতা জানানো হয়।
শুনানিকালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘনা আলম আদালতের উদ্দেশে বলেন, তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের পেশাগত সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত তাঁকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন, যার যথেষ্ট প্রমাণ তাঁর কাছে আছে এবং তিনি তা উপস্থাপন করতে পারেন। তখন বিচারক মন্তব্য করেন, বিষয়টি এই মুহূর্তে আলোচনার নয়। মেঘনা আলম আরও বলেন, “বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার ওপর নির্ভর করে। আমি ছয়টি মহাদেশের ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছি। নারীদের অধিকার নিয়েও বহু কাজ করেছি। তাই আমার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো ও পাসপোর্ট ফেরত চাই।” এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাল্টা মন্তব্য করে বলেন, “তিনি নারীদের নিয়ে কী কাজ করেন, তা মামলার এজাহারেই পরিষ্কার। মূলত তিনি নারীদের ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতেন।” প্রতিবাদ জানিয়ে মেঘনা বলেন, “আপনি রাষ্ট্রদূতকে অসম্মান করছেন।” এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে তর্ক শুরু হয় এবং মেঘনা বলেন, “এখন পর্যন্ত আমি নিরপরাধ।”
শুনানি শেষে আদালত মেঘনা আলমের জব্দ করা ডিভাইসগুলোতে রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান আছে কি না, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এসব ডিভাইসের প্রকৃত মালিকানা যাচাই করে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে। এরপর অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে, সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, দেওয়ান সমির কাওয়াই গ্রুপ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ম্যানপাওয়ার ফার্মের মালিক। এর আগে তাঁর মালিকানাধীন মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও স্মার্ট মেয়েদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হতো। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে আদায় করা হতো বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য মেঘনা আলমকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাঁর আটকাদেশ বাতিল করা হয়। ১৭ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং ২৮ এপ্রিল আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।